logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
মোবাইলফোন নজরদারিতে বড়ধরনের বিনিয়োগ
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ১৬:৪৫:৫৬
image

ঢাকা: মোবাইলফোন নজরদারিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ, যার একটি অংশ দিচ্ছে মোবাইলফোন অপারেটররা৷ আর একটি জার্মান কোম্পানি এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷


মোবাইল ফোন নজরদারির এই উন্নত ব্যবস্থায় ফোন কল, এসএমএস এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য, ছবি এবং কথোপকথন সবকিছুরই নজরদারি সম্ভব। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি দিয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা৷


‘অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স বাংলাদেশ' (অ্যামটব)-এর প্রধান নির্বাহী নুরুল কবির জানান, ‘‘লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী মোবাইল ফোন অপারেটরদের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে৷'' তবে এই অর্থের পরিমাণ কত তা জানাতে রাজি হননি তিনি৷ আর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অর্থের পরিমাণ ভুল না ঠিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না৷''

চলতি মাসেই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে মোবাইল ফোন কথোপকথনের কিছু রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে নেতা-কর্মীদের প্রতি৷ এই বৈঠকের পরই মোবাইলফোনে নজরদারি ব্যবস্থা আরো উন্নত করার সিদ্ধান্ত হয়৷


বাংলাদেশে মোবাইলফোনে নজরদারির যে ব্যবস্থা চালু আছে, তা পাঁচ বছরের পুরনো৷ এর প্রযুক্তি নেয়া হয় নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক থেকে৷ তারা তাদের ব্যাবসার একটি অংশ এখন জার্মানির আরেকটি নতুন কোম্পানি ট্রোভিকর-এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং তারাই এখন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন মনিটিরিং সার্ভিলেন্স-এর প্রযুক্তিগত সহয়াতার চুক্তি অধিগ্রহণ করেছে৷

সরকারের ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টারের (এনএমসি) মাধ্যমে এই নজরদারি করা হয়৷ বর্তমান ব্যবস্থায় একবারে ২০ হাজার মোবাইলফোনের কল রেকর্ড করা যায়৷ ধারণা করা হচ্ছে উন্নত ব্যবস্থায় এই ফোন কল রেকর্ডের সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ এছাড়া থ্রিজি মোইল ফোন মনিটরিং-এর সর্বশেষ প্রযুক্তিও বসানো হবে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী বৃদ্ধি, প্রযুক্তির উন্নতি এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিস্তৃতির কারণে সার্ভিলেন্স এবং মনিটরিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রয়োজন৷


বাংলাদেশের টেলি-যোগাযোগ আাইনের ৯৭ (ক) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলি-যোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথাবার্তা প্রতিহত, ধারণ বা এ সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সম্পৃক্ত কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে পারবে৷ ওই আইনের মধ্যে থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার কাজ করছে৷


মনিটরিং কাজে এনএমসি-র মোবাইল ফোন ডাটাবেজের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন হয় জানতে চাইলে অ্যামটব-এর প্রধান নির্বাহী নুরুল কবির জানান, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না৷ এ তথ্য দিতে পারবে এনএমনি ও বিটিআরসি৷''


জানা গেছে, এর আগে ২০১২ সালে ইন্টারনেটে নজরদারি করতে পারে এমন কয়েকটি সফটওয়্যার ইউরোপীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছিল বাংলাদেশ৷ ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে অডিও, ভিডিও এবং লিখিত কোনো ডকুমেন্ট দূরবর্তী অবস্থান থেকে নজরদারি করার জন্য ‘ফিনস্পাই' নামে এই সফটওয়ারের লাইসেন্স কেনে বাংলাদেশ৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিনস্পাই কম্পিউটারে একবার যুক্ত করার পর এটি নির্দিষ্ট অন্য একটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে৷ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেটের যেকোনো অ্যাপস-এর কথোপকথনও রেকর্ড করতে পারে৷ এছাড়া ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, ই-মেল এবং লুকানো ফাইল উদ্ধার করতে পারে সফটওয়্যারটি৷ ব্যবহারকারীর কোনো পাসওয়ার্ড থাকলেও ফিনস্পাই তা উদ্ধার করতে সক্ষম৷


র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইটে ‘ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভিলেন্স ইকুইপমেন্ট' ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে৷ ব়্যাব যে নজরদারি সরঞ্জাম ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে, তা হলো গাড়িতে ব্যবহারযোগ্য শক্তিশালী আইএমএসআই ক্যাচার৷ দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২০১৪-এর ১২ ফেব্রুয়ারি৷ দরপত্র জয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা ওই বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন৷


প্রসঙ্গত, দরপত্র বিবরণে স্পষ্ট করে বলা আছে জয়ী প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷

সব মিলিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারন্টে নজরদারি যে বাড়ছে, তা পরিষ্কার৷ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ফাইবার অ্যাট হোম-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির জানান, ‘‘এটা স্পষ্ট যে সরকার মোবাইল ফোন সার্ভিলেন্স এবং মনিটরিং-এর বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে৷ ব্যবহার করছে সর্বাধুনিক, সর্বশেষ প্রযুক্তি৷ তবে এই বিনিয়োগের পরিমাণ কত, তা হয়ত সরকার প্রকাশ করছে না অভ্যন্তরীণ কারণে৷'' সূত্র: ডিডব্লিউ


(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/জেবি)