সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি বাস্তবতা বিবর্জিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ২১:১৮:৪৩

ঢাকা: সম্পাদক পরিষদের নামে মঙ্গলবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে দেয়া বিবৃতি বাস্তবতা বিবর্জিত, সত্যের অপলাপ, পক্ষপাতমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বক্তব্যে আজ একথা জানিয়ে বলা হয়, দেশ যখন গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা ও সম্প্রসারমান যুগে প্রবেশ করেছে, তখন সম্পাদক পরিষদের নামে প্রদত্ত বিবৃতি দেশের সঠিক চিত্র প্রতিফলনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক।
বক্তব্যে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার তথা তথ্য মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের সম্পূরক। তাই সরকার গণমাধ্যমকে সক্রিয়, উন্মুক্ত ও গতিশীল রাখতে সদাসচেষ্ট।
বক্তব্যে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা, ভিন্নমত, সরকারি কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি বা কর্মকর্তাদের আইনবহির্ভূত কাজ বা দুর্নীতির বিষয়ে রিপোর্টিংয়ে সরকার কখনও কোনো বাধা দেয়নি। একইভাবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সংবাদ ও আলোচনায় সরকারের বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্যসহ অসংখ্য সমালোচনা করা হয়। সেখানেও সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। বরং গণমাধ্যমের সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে সরকার প্রশাসনে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে সদাসচেষ্ট।
কোনো গণমাধ্যমের কোনো প্রকাশনা বা সম্প্রচার বিষয়ে সংসদ যদি আলোচনা বা সমালোচনা করে, তা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ নয় জানিয়ে বলা হয় , রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে আলোচনা করার অধিকার সংরক্ষণ করে সংসদ।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্মরণকালের মধ্যে এখন সবচাইতে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম সবচাইতে বেশি সম্প্রসারিত ও বিকাশ লাভ করেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে গত ৬ বছর ২ মাসে সরকার গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপমূলক কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। সম্প্রচার মাধ্যমের বিকাশের লক্ষ্যে উন্মুক্ত মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার আলোকে যে সম্প্রচার কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন, তাও সকল গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির আওতাধীন। বিদ্যমান প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট, প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট, টেলিভিশন লাইসেন্স প্রদানের শর্তাবলী বা বিজ্ঞাপন নীতি কোনটিই গণমাধ্যমের সংকোচন বা নিয়ন্ত্রণমূলক নয়।
বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রেও সাংবাদিক গ্রেপ্তার আইন সংশোধন করে শিথিল করেছে জানিয়ে বলা হয় , সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, সংবাদপত্র বা ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার মতো কোনো আইন এ মুহূর্তে দেশে নেই।
বক্তব্যে বলা হয় ,শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করার জন্য এবং অবাধ তথ্য ও সংবাদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে, গঠন করেছে তথ্য কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সরকার তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে। সকল সাংবাদিকের সুষম বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে ওয়েজবোর্ড। অসুস্থ, অসচ্ছল, আহত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনকে সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে একবাক্যে সকলেই স্বীকার করেছেন।
বিগত সরকারের আমলে যেখানে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক মিলে মোট ছয়শত পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হতো, সেখানে এখন এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার দুশো’রও বেশি। দেশে এখন ২৬টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সম্প্রচারিত হচ্ছে, যেখানে সরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা মাত্র ৩টি। একইসাথে বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে সম্প্রচারিত হচ্ছে ১১টি এফএম রেডিও। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে ৩২টি কমিউনিটি রেডিওকে সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে, যার মধ্যে ১৪টির পূর্ণ সম্প্রচার চলছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মহল বা ব্যক্তির মালিকানাধীন সকল গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে উল্লেখ করে আরো বলা হয়, দেশব্যাপী তাদের অসংখ্য পত্র পত্রিকা যেমন অবাধে প্রকাশিত হচ্ছে, তেমনি তাদের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধে সম্প্রচারিত হচ্ছে। মালিকদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর কখনও কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। দলীয় মত প্রচারের কারণেও কোনো গণমাধ্যমকে নিগ্রহ করা হয়নি। প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে দেশের গণমাধ্যম কত উন্মুক্ত ও স্বাধীন।
বক্তব্যে বলা হয় ,অতীতে সাংবাদিকদের ওপর প্রশাসনের চাপ পরিলক্ষিত হতো। বর্তমান সরকার তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। উপরন্তু মাফিয়া, জঙ্গি ও ধর্মাশ্রয়ী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার থেকে সাংবাদিকদের বাঁচাতে দৃঢ়ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।
(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/জেবি)