ঢাকা: আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যেন পেরে উঠছে না নির্বাচন কমিশন।
এমনিতেই পথে প্রান্তর থেকে শুরু করে অলিগলিতে আইন অমান্য করে নির্বাচনী প্রচারপত্র-যেমন ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সরানোর হুকুম তালিম করাতেই নির্বাচন কমিশনের গলদঘর্ম অবস্থা।
এ জন্য নামানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার উপর আবার নতুন উতপাত এখন ডিজিটাল প্রচার।নির্ধারিত তারিখের অনেক আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
প্রযুক্তির ব্যবহার করে আগাম প্রচারের বিষয়টি কমিশনের নজরে আনলে তারা অনেকটা বিপাকে পড়ে যান। হয়ে যান কিংকর্তব্যবিমূঢ়ও। ভাবখানা এমন যে এ আবার কী? তৎক্ষণাৎ কমিশন বুঝতে পারছিলেন না ডিজিটাল প্রচার ঠেকাতে কি করা উচিৎ।
তফসিল ঘোষণার আগেই তারা তাদের প্রচারে নতুন কৌশলের অংশ হিসাবে বেছে নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটার।বিষয়টি কমিশন নজরেই আনেনি।
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য ভোট চেয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এমনকি রঙিন পোস্টার বানিয়ে তা পোস্ট করছেন ফেসবুকে। আর তা ট্যাগ করছেন ফেসবুক বন্ধুদের। কেউ কেউ তা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকে।এই প্রচারকে সহজ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।তবে এতে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
নতুন এই কৌশল ঠেকাতে কী করা যায় তা নিয়ে নতুন ভাবনায় পড়েছে কমিশন।কীভাবে আইনের ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন বলে জানা গেছে।
ফেসবুক ঘেটে দেখা যায়, অর্নব সরকার তার ফেসবুকে ছবিসহ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘ঢাকা উত্তরে কাফি রতন ও দক্ষিণে রুহিন হোসেন প্রিন্স ‘সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা চাই’ আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী’। আর তা শেয়ারও করেছেন অনেকে।
প্রদীপ ঘোষ শেয়ার করেছেন মেয়র প্রার্থী সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্সের ছবি সম্বলিত পোস্টার। আনোয়ার বাস্তবপন্থি নামের আইডিতে শেয়ার করেছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স ও আবদুল্লাহ কাফি রতনের পোস্টার। আর এতে লাইক-কমেন্টও পড়ছে ব্যাপকহারে।
একই দৃশ্য দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগের আরেক মাধ্যম টুইটারেও। ফেসবুকের মতো সেখানে এত ব্যাপক সুযোগ না থাকলেও সংক্ষেপে টুইট করে অনেকেই প্রচার চালাচ্ছেন নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে।
আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনের ২১ দিন আগে থেকে কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের প্রচার চালাতে পারবে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর কারও কারও প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।
তবে ফেসবুক-টুইটারের প্রচারের বিষয়ে অবগত নয় কমিশন। আচরণবিধিতে পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানারসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকলেও ফেসবুক-টুইটারের মতো ডিজিটাল প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ নেই।ইসির কেউই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি কিংবা ভাবেনওনি। ফলে এ নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায়ই পড়েছে কমিশন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তাও সঠিক করে বলতে পারছে না কমিশন।
ফেসবুক-টুইটারে প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ইসির যুগ্ম সচিব জেসমনি টুলি কিছুক্ষণ ভেবে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে ফেসবুক-টুইটার তো এবারই নতুন। এই বিষটি আচরণবিধিতে উল্লেখ নেই। তবে যেহেতু নির্বাচনের ২১দিন পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার-প্রচারনা নিষিদ্ধ, তাই এই ধরনের প্রচার আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আগে ফেসবুক-টুইটার ছিল না। বিষয়টি যেহেতু নতুন, তাই এটি নিয়ে আমাদের বসতে হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব শামসুল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, “এটা নিয়ে কমিশন এখনও সেভাবে ভেবে দেখেনি। তবে এটাও একধরনের প্রচার। আমরা কমিশনে বিষয়টি উপস্থাপন করবো।”
(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/ইরা/জেবি/ এআর/ ঘ.)