ঢাকা: উগ্র জঙ্গিবাদিদের প্রচারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে এখন ফেসবুক। এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে উগ্রমতবাদও প্রচার করা হচ্ছে বাধাহীনভাবে। এ নিয়ে সমাজে একটি অস্থিরতাও রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম ব্যাবহার করে নামে বেনামে হুমকি দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এমন কি রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রধান নির্বাহীকে জাড়িয়েও নানা অপপ্রচারেরও হাতিয়ার এখন ফেসবুক।
সর্বশেষ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসাবে পরিচিত অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনার পর বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে।
এসব হত্যাকা-ের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কঠোর নজরদারী থাকলে অভিজিতের মতো মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটতো না। জীবন দিতে হতো না ব্লগার রাজীবকেও।
এ ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য হচ্ছে হুমকির বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়নি বলেই এ ব্যাপার পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি বা হচ্ছে না।
নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোথায় নাগরিকের নিরাপত্তা হুমকির মুখে? তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে কি পড়ে না?
প্রশ্ন উঠেছে অভিজিৎ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি সাইফুর রহমান ফারাবীকে এর আগে একবার ফেসবুকে হত্যার হুমকির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কিছুদিন জেলে থাকার পর সে ছাড়া পেয়ে ফেসবুকে ফের সরব হয়ে উঠে। অভিজিতকে হত্যার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সে একাধিকবার পোস্টও দিয়েছে। পুলিশ যদি তাকে নজরদারীতে রাখতো তাহলে অভিজিতের মতো ব্যক্তিকে জীবন দিতে হতো না হয়তো।
এ নিয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. হাসান আরাফাতের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগ করলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাইফুর রহমান ফারাবী যে অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল যে ব্যাপারে এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
তবে ব্লগার রাজীব হত্যার পর রাজীবের জানাযা পড়ানোর হুজুরকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ফারাবীর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে আনলে তিনি বলেন, তখনকার প্রেক্ষাপটরা ভিন্ন ছিল।
তিনি বলেন, ফেসবুকে কাকে কী কমেন্ট করে সেটা ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বরের ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়া ইমামকে ফেইসবুকে হত্যার হুমকি দেয় সাইফুর রহমান ফারাবী। রাজীব খুন হওয়ার পরদিন ফারাবী সাফিউর রহমান ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, “যেই ইমাম থাবা বাবার (রাজীব) জানাজা পড়াবে, সেই ইমামকেও হত্যা করা হবে। জানাজার নামাজ হচ্ছে মুসলমানদের জন্য। কোনো নাস্তিক-মুরতাদ, যে সারা জীবন আল্লাহ ও তার রাসুলকে গালিগালাজ করেছে, তার কখনো জানাজা হতে পারে না। এ ঘটনায় ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই সময়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ ফারাবীর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি প্রসিকিউশন দেয় ঢাকার একটি আদালতে । পরে সে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় বেরিয়ে আসে।
এ ব্যপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই সময়ে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গোয়েন্দা পুলিশ একটি প্রসিকিউশন দিয়েছিল আদালতে। তখন তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করার সুযোগ ছিল না। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি আইন সংশোধিত হওয়ার কারনে কেউ কাউকে হুমকি দিলে মামলা করা যেতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/৫ মার্চ/এএ/এআর/ ঘ.)