logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে বিতর্কিতরা!
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০৯:৫৭
image


ঢাকা: দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। স্বাধীনতার পর এই বিতর্কের অবসানে প্রত্যেক সরকারই যার যার মতো করে চেষ্টা করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে বিতর্কের অবসান হয়নি বরং বেড়েছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের এই তালিকা নিয়ে সৃষ্ট নানামুখী বিতর্কের পর তা নিরসনে এবার মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।



মন্ত্রণালয় তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও মহানগরীগুলোতে সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের শক্তিশালী কমিটি গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।



এরই অংশ হিসাবে আজ মঙ্গলবার দেশের ২৫০ জন সংসদ সদস্যের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।


তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে কমিটির প্রধানদের মধ্যে কয়েকজন বিতর্কিত এমপির নাম রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত দুই জন এমপির নাম জানা গেছে।


এরা হচ্ছেন-জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ-হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং কুড়িগ্রাম-আসনের সংসদ সদস্য এ কেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুল। এই দুই এমপির পিতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।


তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাবা পনির উদ্দিন স্বাধীনতাবিরোধী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পনির উদ্দিনের নানা অপকর্মের কথা সবারই জানা।


এছাড়া মাঈদুল ইসলাম মুকুলের পিতা ছিলেন আবুল কাশেম।একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যে কয়েক জনের নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে আবুল কাশেমের নামও রয়েছে।


এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটির প্রধান হিসাবে সংসদ সদস্যদেরকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা নাও হন তবে মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক করে দেওয়া একজন প্রতিনিধি কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করবেন।


এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে যদি এসব বিতর্কিত লোকদের রাখা হয় তাহলে সেই তালিকা কতটা সমাদৃত হবে?


সারা দেশে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি গঠন করা হবে।


মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে এক লাখ ২৩ হাজার ৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা পড়েছে।


যাচাই-বাছাই ও স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার কাজ চলতি বছরের আগামী ২৬ মার্চের দেয়া কথা ছিল। কিন্তু কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে ২৬ মার্চের  মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ দেয়া হচ্ছে না।


গত বছর ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তার অধীনস্থ উপজেলাগুলোর যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির নাম চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই চিঠি দেওয়ার তিন মাস পার হলেও সভাপতিদের সবার নাম মন্ত্রণালয়ে আসেনি। যে কারণে চলতি বছর গত ৭ জানুয়ারি পুনরায়  সভাপতির নাম চেয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।  


সভাপতির বাইরেও কমিটিতে যারা সদস্য হিসাবে থাকছেন তাদের মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি, জেলা কমান্ডার বা তার মনোনিত প্রতিনিধি, উপজেলা কমান্ডার, যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জামুকার সদস্য ও ইউএনও।


মহানগর কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে সভাপতি করে আরও পাঁচজন সদস্য থাকবেন। এছাড়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থাকবেন বলে সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়।


জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নতুন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই শেষে স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’


মন্ত্রী বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা সনদ নিয়েছেন এবং প্রমাণিত হয়েছে তাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে।


যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, উপজেলা পর্যায়ের কমিটি দিয়ে এগুলো যাচাই করবে। লাল মুক্তিবার্তার বাইরে সবগুলো তালিকাই যাচাই-বাছাই করা হবে।


(ঢাকাটাইমস/২৫ ফেব্রুয়ারি/এইচআর/এআর/ ঘ.)