ঢাকা: আবার অস্থির হতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। সূচকের অনিয়ন্ত্রিত পতনে বরাবরের মতো এবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে নিজেদের কপালকে দোষরোপ করা ছাড়া আর কোনো কিছুরই সুযোগ মিলছে না তাদের।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পরেও সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূতের কারণে এমনটি ঘটছে।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে শুধু বুধবারই সূচক ও লেনদেন চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। এদিন ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া ডিএস-৩০ সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ০৮ পয়েন্টে স্থির হয়।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬১টির, কমেছে ৩৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির দাম।
লেনদেন হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ১৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ৬৬০ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ২১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ২৬০ পয়েন্টে এবং সিএএসপিআই সূচক ২৬১ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ৬১১ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
অথচ চলতি সপ্তাহের বাকি সময়জুড়ে পুঁজিবাজারে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর মধ্যে সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ২ শতাংশ বা ৮৮ পয়েন্ট কমে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। এতে করে প্রধান এ সূচকটি ২০১৩ সালের অক্টোবরের অবস্থানে ফিরে গেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর প্রধান এ সূচকটি সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৯৪৬ পয়েন্টের অবস্থানে ছিল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটিও কমতে কমতে গতকাল দিনশেষে ১২ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এদিন সূচকটি ২১৮ পয়েন্ট বা পৌনে ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২০৯ পয়েন্টে। সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনের পরিমাণও কমে গেছে।
এর পরের দিন মঙ্গলবার সূচকে ঊর্ধমুখী হলেও কমে যায় লেনদেন। এদিন এসইর ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ১৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া ডিএস-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫২২ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৯৮৭ পয়েন্টে স্থির হয়।
এদিন লেনদেন হয়েছে ৩২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ সোমবার লেনদেন হয়েছিলো ৩৩০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৭৭ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ৫১০ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ৪৬ পয়েন্টে এবং সিএএসপিআই সূচক ১৪০ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এদিন লেনদেন হয় মোট ২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
অবশ্য এ পতনের সূত্রপাত বিগত সপ্তাহের বুধবার থেকে। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহে সূচক ও লেনদেন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারের এ অস্থিরতা তাদের মনে বারবার ২০১০ সালের ধসের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ২০১০ সালের শেয়াবাজার ধস তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান ইব্রাহীম খালেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০১০ সালে যারা ছিল তারা তো এখনও রয়ে গেছে। এর কারণে মানুষের আস্থার পতন ঘটছে, যার ফল সূচক ও লেনদেনে দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালিয়াজেশন সঠিকভাবে না হওয়ায় এ অস্থিরতার আরেকটি কারণ। কেননা, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্দেশ্যে ছিল স্টক এক্সচঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ। কিন্তু এখনও তা সম্ভব হয়নি। বোর্ডের মধ্যেও তাদের প্রতিনিধি রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আরও মনে করেন, বাজারে আগত নতুন শেয়ারগুলো দুর্বল কোম্পানি হওয়ার কারণে এ ধরনের পতন ঘটছে।
ঢাকাটাইমস/৬মে/এসবি