logo ২৬ এপ্রিল ২০২৫
আন্দোলন থামলেও আতঙ্ক কাটেনি বিএনপিতে!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
১৮ মে, ২০১৫ ০০:৩৬:১২
image

ঢাকা:  গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটেনি বিএনপিতে।আন্দোলন থেমে গেছে এক মাসেরও বিশ সময় হলো।কিন্তু বিএনপির বেশিরভাগই নেতা এখনো গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।


সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে ভারতের শিলংয়ের একটি হাসপাতালে পাওয়ার পর বিএনপি নেতাদের মধ্যে চলমান আতঙ্কটা আরো বেড়েছে বলেই দৃশ্যত মনে করছেন অনেকে।


কেননা সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে বিএনপি নেতারা যেন মুখে কুলুপ এটেছে।


প্রেসক্লাবের সামনে নাম সর্বস্ব কিছু সংগঠনের উদ্যোগে বক্তৃতা দিতেও এখন আর দেখা যায় না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামসহ বিএনপি নেতাদেরকে।


গত সিটি নির্বাচনের কিছু দিন আগে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাসকে আদালত প্রঙ্গনে দেখা গেলও ভোটের আগ থেকেই তাঁর খোঁজ মিলছে না।


মাঝে মধ্যে হঠাৎ দেখা গেলেও প্রকাশ্যে নেই ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলও।


ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে প্রার্থীতা বাতিল হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু কোথায় আছেন জানা নেই কারো। দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে বিএনপি নেতাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ অবশ্য জেলে। নাশকতার একাধিক মামলায় তারা এখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।


শুধু মিন্টু কেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের  খোঁজ নেই বিএনপির ঢাকামহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবসহ বেশিরভাগ নেতার। হাবিনেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না।


রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে এখন আর পুলিশের সেই নিরাপত্তা বলয় নেই।


সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর পর আয়োজিত মিলাদ মাহফিলগুলোতেও বিএনপি নেতাদের মধ্যে আতঙ্কের বিষয়টি ফুটে ওঠে।


গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। একইসঙ্গে কার্যালয়টিও তালাবদ্ধ করে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে তিন মাসের আন্দোলনে গোটা সময়ই এটা তালাবদ্ধ ছিল। এরমধ্যেও নিয়মকরে কার্যালয়ের আশপাশে পুলিশের প্রহারা থাকায় নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় যাওয়া আসাও করতেন না।


তবে ঢাকা সিটি করপারেশন নির্বাচনকে রাজনীতির মাঠের চিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে শিথিল হয় আসে।


এরই মাঝে তালা কেটে কার্যালয়ে অবস্থান নেয় বিএনপি নেতারা।তবে ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা না দিলেও নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন কর্মী আটক করে। এতে অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া নেতাকর্মীরা কার্যালয়মুখী হচ্ছেন না।


গত ৩ মে কারাবন্দি অবস্থায় রাজশাহী হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে মারা যান বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন পিন্টু। পরের দিন মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা হয়।


এসময় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। কিন্তু জানাজা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দ্রুত গা-ঢাকা দেন। এক্ষেত্রে তরুন নেতারা ছিলেন এগিয়ে।


এরপর পিন্টুর স্মরণে বিএনপি দোয়া মাহফিল করে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচ তলায় অনুষ্ঠিত এই মিলাদে উল্লেখযোগ্য কোনো শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি। কর্মীদেরও উপস্থিতিও সেইভাবে ছিল না।


পরের দিন বাদ আসর মিলাদের আয়োজন করে ছাত্রদল। নিজেদের মিলাদেও উপস্থিত ছিলেন না ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান ও সম্পাদক আকরামুল হাসান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারনেই তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।


পরে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আজমল হক পাইলট। নেতাকর্মীদের সেইভাবে উপস্থিতি না থাকলেও মিলাদ শেষে তবারক নিয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সঙ্গে অন্য একটি গ্রুপের সংঘর্ষও হয়।


পরবর্তীতে যুবদল আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে একই চেহারা দেখা যায়। সংগঠনের হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতাকে দেখা যায়নি সেখানেও।


তবে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম।


পিন্টুর স্মরণে মিলাদের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সেখানে দেখা যায়নি। মামলা থাকায় গ্রেপ্তার হতে পারেন এই আশঙ্কায় সংগঠনটির শীর্ষ এই তিন নেতা উপস্থিত হননি বলে জানা গেছে।


সবশেষ শনিবার বিকালে একইস্থানে মিলাদের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, মহানগরের সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত হলেও মহানগরেরই অনেক নেতাকে দেখা যায়নি।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার  মহানগর বিএনপি এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আন্দোলন না থাকলেও এখনো পুলিশ প্রায় প্রতিরাতে বাসায় হানা দেয়।গ্রেপ্তার হলে জামিন পাওয়া যায় না।তাই আতঙ্ক তো আছেন। কিন্তু জীবিত অবস্থায় পিন্টু খুব হেল্প করতেন তাই মিলাদে আসলাম।”


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলাগুলো সচল হওয়া, অসুস্থতার পরও নেতাদের জামিন না মেলায় আতঙ্ক বাড়ছে। এছাড়া সরকার নাশকতার মামলাগুলো বিচার কাজ বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে করার ঘোষণা দেয়ায় আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে: জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আতঙ্ক নেই এটা বলবো না। তবে যেহেতু সেইভাবে এখন কর্মসূচি নেই তাই সরকারের কিছুটা নমনীয় হওয়া উচিত। কিন্তু এখনো নেতাকর্মীদের হয়রাণি করা হচ্ছে।”


(ঢাকাটাইমস/১৮মে/বিইউ/এআর/ ঘ.)