ঢাকা: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন আনোয়ার হোসাইন আনু। ২০০৮ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগ শাখা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল সহকর্মীদের মারধর করা। এর এক বছরের মাথায় বহিষ্কারাদেশ থাকা সত্ত্বেও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তিনি। এরপর হল কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসীন হন।
এটা কেবল আনুর ক্ষেত্রেই নয়। ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী পদে যারা আছেন তাদের প্রায় সবাই এভাবেই এসেছেন। ছাত্রলীগের এমন একজন নেতা আহমেদুল বাশার। গত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহকারী সেক্রেটারি। তিনি যখন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন, তখন তাকে একবার বহিষ্কার করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সহকারী সেক্রেটারি হাফিজুর রহমান। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগ্ম আহ্বায়কের পদে থাকাকালে ২০১২ সালে তাকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য-প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দীন মাহি। অন্তর্দলীয় কোন্দলে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাবির হাজি মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটি থেকে ২০১০ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
২০১৩ সালের ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। এ সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা শরীফের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন অর্ধশত নেতাকর্মী। সঙ্গে ছিল রড, চাপাতি, স্ট্যাম্প, হকস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র। অতর্কিত হামলা করা হয় সাংবাদিকদের উপর। এতে অন্তত ৯ থেকে ১০ জন সাংবাদিক আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের হল শাখা কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় ১০ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
একই বছরের ১৩ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলে হামলায় জড়িত চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা হলেন সংগঠনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখার সহ-সভাপতি মো. মেহেদি হাসান ও রানা চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পলাশ, পরিবেশ সম্পাদক মো. মুসতাকিম বিল্লাহ। এ ছাড়া একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় দুইজন অস্ত্রধারীকে ছাত্রলীগ বহিষ্কার করে।
এভাবে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কার্যত কোনো কাজ হয় না। সংঘর্ষ চলেই যাচ্ছে। উল্টো বহিষ্কৃত নেতারা বিভিন্ন সময় পুরস্কৃত হয়েছে। তাদেরকে আরও বড় পদ দেয়া হয়েছে।
অতীত ও বর্তমান ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, বিভিন্ন অপরাধের জন্য যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে পরে তারাই দলের শীর্ষ পদটি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে এ সাজাকে তোয়াক্কা করছেন না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ইমেজ রক্ষার্থে ছাত্রলীগে বহিষ্কারের হিড়িক পড়লেও বাস্তবে দুই একটি ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অস্বস্তি প্রকাশ করা হলেও ছাত্রলীগকে গঠনমূলক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। তাছাড়া মিডিয়ায় যখনই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র ফুটে উঠছে, তখনই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের নামকাওয়াস্তে বহিষ্কার করে দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে। এতে করে কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকার পর দ্বিগুণ উৎসাহে ফের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মে জড়াচ্ছেন সংগঠনটির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর গত দুই বছরে সারাদেশে অন্তত ১১০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ বহিষ্কারই সংঘর্ষ, হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে। ভেঙে দেয়া হয়েছে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটিসহ আরও বেশ কয়েকটি কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, গত এক দশকে বহিষ্কার ছাড়া ভিন্ন কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হত্যা, সংঘর্ষ কিংবা চাঁদাবাজি- অপরাধ যাই হোক কেন সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বহিষ্কারই সর্বোচ্চ শাস্তি। বহিষ্কারের বাইরে বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও ছাত্রলীগের নেই বলে জানান ওই নেতা।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দুই বছর গত হলেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত অর্ধশতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজগুলোতে ওই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত আট থেকে দশজন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী।
প্রতিটি অপকর্মের পর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের নোটিশ পাঠানো হলেও বাস্তবে তা কমই কার্যকর হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও হিমাগারেই রাখা হচ্ছে প্রতিবেদন।
যখনই ওই ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে প্রবাহিত হয়, তখনই শাস্তি পাওয়া ওই সব নেতাকর্মী সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পরে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে তারা পরিচিত হয়ে ওঠেন। এক সময় সাংগঠনকিভাবে ভালো পদও পান তারা। ওই শাস্তি যেন ভালো পদে আসীন হওয়ার জন্য সনদপত্র হিসেবে কাজ করে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইম। কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আল-মাহমুদ তারেকের ওপর হামলার অভিযোগে তাকে ২০১২ সালে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সুইম কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হন। আর তারেক পান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এর কিছুদিন পর সুইম আবারো প্রকাশ্যে আসেন। তার নেতৃত্বে একটি হামলায় কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত হন। এই ঘটনার পর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কমিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। কিন্তু তারপরও সুইম সংগঠনে সক্রিয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে শাহবাগের পিকক বারে মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক দিদার নিজামুল হক ও জিয়া হল সভাপতি আবু সালমান শাওনের নেতৃত্বে বারে ভাংচুর চালানো হয়। বারের কর্মচারীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে প্রায় ২০ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। যার মধ্যে একজনের পা ও মাথা এবং অপরজনের হাত ভেঙে যায়। লুট করা হয় বারের লক্ষাধিক টাকা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে মেহেদীকে সাময়িক বহিষ্কার, দিদার এবং শাওনকে সতর্ক করা হয় মাত্র। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বহনকারী রাজশাহীর রাজকীয় পরিবহনের একটি গাড়ির চালকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। চাঁদা আদায়ের সঙ্গে উঠে আসে সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শরিফুল, ত্বাকী হোসাইন, যুগ্ম-সম্পাদক শাহ-আলম, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের হারুন, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের নিলয়, জহুরুল হক হলের বুলবুলসহ আরো কয়েকজন কর্মীর নাম। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এটিকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিলেও জড়িত ত্বাকী, শাশ্বত ও শিহাবকে বহিষ্কার ছাড়া বাকি সবাইকে অব্যাহতি দেয়া হয়। যদিও এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে নব উদ্যোমে আবারো তারা ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই চিত্র। ২০১৪ সালের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপুর কয়েকজন কর্মীর ফাও খাওয়াতে বাধা দেয়ায় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেলের সঙ্গে দীপুর ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ওইদিন রাতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল, ফয়সাল হোসেন দীপুসহ চার নেতাকে নামকাওয়াস্তে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কারের পরও তাদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় দেখা গেছে। এর একমাস পর ৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেলের সাময়িক বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে পুনঃবহাল করেন। জানা যায়, ‘গুরু পাপের লঘু শাস্তি’ পেয়ে দিগুণ উৎসাহ নিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন ওই দুই নেতা।
দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করার ঠিক ২৫তম দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং বর্ধিত ফি প্রত্যাহারসহ কয়েকটি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে যখন নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছিল, তখন আন্দোলন প্রতিহত করতে তাদের ওপর গুলি চালায় খোদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মাত্র তিন কর্মীকে বরখাস্ত করে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
ইয়াবা ক্রয় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মেধাবী ছাত্র ফারুক। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগ আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির পাশাপাশি ফাটানো হয় অসংখ্য ককটেল। এ ঘটনা তদন্তে কলেজের পক্ষ থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুফিয়া বুলবুলকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সংঘর্ষের সময় বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হলেও তার কোনোটিই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি। ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনকে বহিষ্কারসহ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু মামলার ২৩ আসামির প্রায় সবাই এখনো ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে থেমে নেই তাদের নৈরাজ্য।
ছাত্রলীগের সহিংস ওইসব ঘটনা তদন্দ ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক আশ্বাস পাওয়া গেলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। ফলে সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দ্বিগুণ উৎসাহে অপকর্ম শুরু করেন ওই সব নেতাকর্মী। সংগঠনটির এসব শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজও জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না বলে ধারণা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীরা।
পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারা মনে করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছাত্রলীগের খাস কিংবা নামধারী অনেক নেতাকর্মী বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। ভাংচুর, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ডসহ অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটি। তাদের এসব হামলা আর জোর-জুলুমের কারণে নিরীহ যুবক বিশ্বজিৎ, ফারুকসহ অনেক সাধারণ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। একটি ছাত্র সংগঠনের এসব কর্মকাণ্ড দেশের মানুষকে হতভম্ব ও বিস্মিত করলেও ছাত্রলীগে কোনো শুদ্ধি অভিযান বা সংস্কার করা হয়নি। তাছাড়া কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপকর্ম বা গুরুতর অভিযোগ উঠলে হয় বহিষ্কার বা কমিটি ভেঙে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে। কিন্তু কেন তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করার চারণভূমি হিসেবে ছাত্রলীগের প্লাটফর্ম বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার সময় সংশ্লিষ্টদের নেই।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি চক্র কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। গুটিকয়েক লোকের জন্য তো পুরো সংগঠনের বদনাম হতে পারে না। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এগুলো অনেকটা কমে যাবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মেধার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় ক্যাডারদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে দলীয় ক্যাডারদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অব্যাহত থাকলে ১০ থেকে ১৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেবে এসব শিক্ষক নামের দলীয় ক্যাডাররা। ফলে কোনো সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেন না। এতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের ইতিহাস ভূলুণ্ঠিত হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত নয়। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগহ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে তো আর ছাত্রলীগ বলা যাবে না। এছাড়া কিছু অতি উৎসাহী নেতাকর্মী থাকতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না।’
এ সব বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্র সংগঠন হিসেবে সংগঠনবিরোধী যেকোনো কার্যক্রমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। গত পাঁচ মাসের বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কার, কমিটি ভেঙে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো কাউকে শাস্তি দিতে পারে না। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কেউ যদি পার পেয়ে যায়, তখন ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কিছু করার সুযোগ থাকে না। নাজমুল আরো বলেন, ছাত্রলীগে অপকর্মের সুযোগ নেই। শৃঙ্খলাবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৫মে/এমএম/ঘ.)