ঢাকা:অবশেষে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই এই সম্মেলন হবে। শুক্রবার সম্মেলন ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে ইতোমধ্যেই দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন অনেকেই। এতদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের অনেককেই শনিবার মধুর ক্যান্টিনের সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে।
তবে সংগঠনটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা নেতৃত্বে আসার সুযোগই পাবেন না। কারণ তারা বয়সের ফাঁদে আটকে গেছেন। এসব নিয়ে অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, সম্মেলন করতে দেরি হওয়ায় এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য দায়ী বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কেন্দ্রীয় সংসদের অনেক সিনিয়র নেতা পদ পাবেন না। কারণ গঠনতন্ত্রে রয়েছে, সর্বোচ্চ ২৯ বছর বয়সীরাই ছাত্রলীগের নেতা বা কর্মী হতে পারবেন। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দু’বছর। কিন্তু বর্তমান কমিটির বয়স প্রায় ৪ বছর পূর্ণ হওয়ার পথে। যে কারণে বিপুলসংখ্যক নেতার বয়স ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে।
বিশেষ করে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সম্পাদকদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশের বয়সই ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পর্যায়ে নেই। এর ফলে সহসম্পাদক বা সদস্য কিংবা হল ও থানা পর্যায়ের নেতাদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানাতে হবে।
ফলে সম্ভাব্য নেতৃত্ব যাবে অনভিজ্ঞদের হাতে। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভিজ্ঞদের অভাবে সংগঠনে কোনো পর্যায়ে কখনও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা রোধ করা যাবে না বলে তারা জানান।
ছাত্রলীগের ২০০৬ সালের এপ্রিলের সম্মেলনে ‘বয়স’ প্রথা চালু হয়। এ কারণে সেবার অন্তত ৪০০ নেতা প্রতিযোগিতাই করতে পারেননি। তখন সদস্য পর্যায় থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করতে হয়েছিল। ২০১১ সালে পরের সম্মেলনে অবশ্য এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। সম্পাদক থেকে সভাপতি এবং সহসম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু এ সময়েও বয়সের ফাঁদে পড়ে নেতা হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন আরও তিন শতাধিক যোগ্য কেন্দ্রীয় নেতা। বর্তমানে এ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক নাজুক বলে জানান নেতাকর্মীরা।
সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়স পেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের মৌখিকভাবে অনুমোদিত ১৮৩ সদস্যের কমিটির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০-১২ জন আছেন যাদের বয়স এখনও ২৯ পার হয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ২০১৩ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন করে ঠাঁই দেয়া ২৭৬ জন। এদের মধ্যে অল্প কয়েকজনের বয়স ২৯ বছরের মধ্যে রয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেভেলের কারোই বয়স নেই। সবার ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে। সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে দুইএকজনের বয়স আছে। এদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন আনু। এছাড়া সম্পাদক পর্যায়ে যাদের বয়স আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত, পরিবেশ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, আইন সম্পাদক মইজুদ্দিন শরিফ রুয়েল, ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ আল হাসান, সহসম্পাদক আসুদজ্জামান নাদিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদকের একঘুঁয়েমি সিদ্ধান্তের কারণে অনেক অভিজ্ঞ নেতারা বয়সের ফাঁদে পরে নেতৃত্ব থেকে সিটকে পরেছেন। এই জন্য ভবিষ্যতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সম্মেলন করার কথা না বলতেন তাহলে তারা আরও দেরি করতো। প্রধানমন্ত্রী বলার পরে তারা বাধ্য হয়েই সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। দেশের সবচেয়ে বড় একটি সংগঠনে এটা থাকাটাই স্বাভাবিক। কমিটি গঠন গঠনতন্ত্র মেনেই করা হবে। এখানে কে বাদ পড়ল আর কে থাকলো সেটা মুখ্য নয়। আর অভিজ্ঞতা কোনো সমস্যা নয়।’
(ঢাকাটাইমস/১০মে/এমএম)