logo ২৬ এপ্রিল ২০২৫
ভোটের সেই পুরোনো সংস্কৃতি কি ফের চালু হলো দেশে!
তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৮ মে, ২০১৫ ০০:২১:১০
image

ঢাকা: এরশাদ সরকারের শাসনামলে পাবকিল পরীক্ষা চলার সময় কেন্দ্রে কেন্দ্রে একটি স্লোগান শোনা যেত-“ভোট হয়েছে যেভাবে পরীক্ষা হবে সেভাবে”।


সেসময় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা মানেই ছিল নকলের মহোৎসব।এরশাদ তাঁর শাসনামলে সেই বদনাম থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি।


এরশাদের আগেও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে “হ্যা” বা “না” ভোটের সময় ব্যালট পেপারে গণসিল মারার কথা আমাদের কম-বেশি সবারই জানা।


শেষ পর্যন্ত নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আমরা ভোট জালিয়াতি থেকে নিজেদেরকে বের করে আনতে সক্ষম হই।


১৯৯১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপকমাত্রায় ভোট জালিয়াতি হওয়ায় আওয়ামী লীগ গণআন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গণআন্দোলনে বিএনপি সরকার পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাস করে। সে থেকে আমরা কমবেশি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ধারায় ফিরে আসি।তবে গত পাঁচ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপভোগ করছিল সাধারণ মানুষ।সেই নির্বাচন নিয়ে সেভাবে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি জোরালোভাবে।


কিন্তু গত পাঁচ জানুয়ারির ভোটারবিহীন সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশ নির্বাচনের সুষ্ঠু ধারার সংস্কৃতি থেকে বের আসতে শুরু করে।


সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি নির্বাচনেও তার স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শাসক দলের পক্ষে সেই পুরোনো ধারায় ভোট জালিয়াতি, ভোট কেন্দ্র দখল, গণহারে সিলমারার কর্মটি চলে। এই নিয়ে গণমাধ্যমেও সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়।মানুষের মনে এখন প্রশ্ন তাহলে কি আবার সেই এরশাদের আমলের ভোট শুরু হলো? আমরা কি আবার পেছনে ফিরে যাচ্ছি?  


 


রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষ্ক্রিয়তা এ জন্য বহুলাংশে দায়ী।তবে এ ক্ষেত্রে সরকারেরও ভূমিকাও বিরাটভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থায় দখলের সংস্কৃতি চালু হয়েছিল আশির দশকে জিয়া/এরশাদের আমলে।এরপর মাগুরা ও মিরপুরের বিতর্কিত নির্বাচন।


সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রথমে পাঁচ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন পরে উপজেলা নির্বাচন এবং সম্প্রতি তিন সিটি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ফরিদপুর জেলার নাগরকান্দা পৌরসভা নির্বাচন ব্যাপকভাবে ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।


গতবছরের প্রথম দিকে কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম ও সহিংসতা ঘটে।


সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে.(অব.) এম সাখওয়াত হোসেন এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।আর এর দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তায়।তবে সরকারের ভূমিকাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিতর্কিত এই ভোট কার জন্য ভাল জানি না। তবে এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য ভালো উদাহরণ নয়।তারা জনগণের আস্থা হারিয়েছে।


ডেমোক্রেসি ওয়াচের পরিচালক তালেয়া রেহমান বলেন, সিটি নির্বাচনের ইসির ভূমিকা দুঃখজনক। তারা সরকারের হুকুম তালিম করেছে। পরিস্থিতি খারাপ হলোও কিন্তু সেনাবাহিনীর সহযোগিতা তারা নিল না।


তিনি বলেন, তারা এমন একটি নির্বাচন উপহার দিল যার কারণে আগামীতে ভোটারা আর ভোট কেন্দ্রে যাবে না। তারা মনে করবে তাদের আর ভোট দিয়ে লাভ নেই।


ডেমোক্রেসি ওয়াচের এ পরিচালক আরো বলেন, সিটি ভোটের আগেও তারা অনেক ভাল পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন পদক্ষেপ ছিল ঠিক উল্টোটা।


তালেয়া রেহমান বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বিরোধী দল বিএনপির এমন দারি আরো পাকাপোক্ত হলো।


রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'আমরা বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য ইসিকে দায়ী করছি কিন্তু আমি মনে করি, স্বচ্ছ নির্বাচনের দায় সরকারের ওপরও বর্তায়। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেতো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে ১/১১-এর সময়ে, তখন তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছিল বলেই সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছিল। সমস্যা হলো তাদের, যারা এই নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। আর এটিই কমিশনের কাজকে কঠিন করে দেয়। হ্যাঁ, এই কমিশন চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন কিন্তু তাতে কি কোনও পরিবর্তন আসবে?'


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপ্রচার। ভোটকেন্দ্র দখল বলতে আমরা বুঝি বিপক্ষের প্রার্থীর এজেন্ট, সমর্থককে জোর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এমন কিছুই ঘটেনি। কোন ভোটার ভোট না দিয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরে যাননি।


(ঢাকাটাইমস/৮মে/টিএ/ এআর/ ঘ.)