ঢাকা: ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে পরপর তিনদিন হামলার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ দায় স্বীকার না করলেও ঘটনাস্থলের একাধিক ছবিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এসব হামলায়।
দলের কর্মীদের ছবি আসলেও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তবে সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে রাজপথে প্রতিহত করার পূর্ব ঘোষণাই বাস্তবায়ন করছেন সংগঠনের কর্মীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের কুটক্তির প্রতিবাদে গত বছরের শেষের দিকে খালেদা জিয়াকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। বিএনপির সমাবেশস্থলে নিজেরা অবস্থান নিয়ে গত ২৯ শে ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার কর্মসূচি প- করে দেয় ছাত্রলীগ। সেদিনই ঘোষণা দেয়া হয়, খালেদা জিয়া যেখানেই যাবেন, সেখানেই তাকে প্রতিহত করবে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিতভাবেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করেছে। ১৯ এপ্রিল উত্তরায় ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানার নেতেৃত্বে খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখানো হয়। প্রথম দিন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি।
এর পরের দিন কারওয়ান বাজার এলাকায় তার গাড়িবহরের হামলা চালিয়ে প্রায় ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের কয়েকজন আহত হন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায় এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আল আমিন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাকিরসহ রাজু, তুহিন, মাহমুদ, রাহিম রাহমান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের খোকন।
এরপরের দিন রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায়ও হামলা করা হয়। একটি সূত্রে জানা গেছে ্এই হামলায় অংশ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতে হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে খালেদা জিয়ার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র স্বীকার করেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেল, মাহমুদুল হাসান ওরফে টিটো, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান প্রমুখ হামলার সময় ওই এলাকায় ছিলেন এবং তাঁরাসহ আরও অনেকে সরাসরি ওই হামলায় অংশ নেন। এ সময় এক যুবককে কোমরে অস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান রুবেল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সেদিন আমরা বাংলামোটর এলাকায় সাঈদ খোকনের নির্বাচনী প্রচারণা চলাতে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে খালেদা জিয়ার গাড়ি আমাদের দুইটা ছেলের গায়ের উপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে আমাদের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে যায়’।
খালেদা জিয়ার ওপর এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত, সংগঠনের একাধিক নেতার এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমরা কেন তার উপর হামলা করবো। তিনি ৯২ দিন দেশের মানুষের উপর যে অত্যাচার করেছেন তাতে আমার মনে হয় যেখানে যাবেন মেখানে প্রতিরোধের মুখে পড়বেন’।
যদি পরিকল্পনা মাফিক না হয় তাহলে আপনাদের কর্মীর কাছে অবৈধ অস্ত্র কেন ছিল জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘অস্ত্র হাতে কেউ ছিল কিনা সেটা আমি জানি না’।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘এ ধরনের হামলা অনৈতিক। এ হামলার দায় নেবে না আওয়ামী লীগ’।
ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/টিএ/ডব্লিউবি/ঘ.)