ঢাকা: তিন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বদল রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
এর আগে পাঁচ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বাদে ছয়টি সিটি নির্বাচন সেনা মোতায়েন ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ঐ নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনেই বিরোধীরা জয়লাভ করে।তবে প্রতিটি নির্বাচনেই বিরোধীরা সেনা মোতায়েনের দাবি জানায়। তবে নির্বাচন কমিশন তাতে কান দেয়নি।
আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন বিএনপি প্রার্থীদের দাবির মুখে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে গত মঙ্গলবার(২১ এপ্রিল) তিন সিটি করপোরেশনের জন্য তিন প্লাটুন সেনা চেয়ে সশস্ত্র বাহিনী কাছে চিঠি পাঠানো হয় কমিশন থেকে।
এ খবর পরের দিন সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়।তবে শেষ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই কমিশন পূর্বের সিদ্ধান্ত বদল করে ব্যারাকেই সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়।
নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব সামসুল আলম স্বাক্ষরিত প্রথম চিঠিতে বলা হয়-নির্বাচনের আগে দুইদিন এবং পরে একদিন তিন সিটি নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকবে। চিঠিতে তিন প্লাটুন সেনা সদস্যের কথাও উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজও বলেছিলেন- ভোটারদের মনে স্তস্তি আনতে সেনা বাহিনী মোতয়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসির এমন সিদ্ধান্তে বিএনপি শিবিরে স্বস্তি নেমে আসলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার দাবি জানাতে থাকে, বাড়তে থাকে সেনা সদস্যদের নিয়ে তাদের দাবিনামা।
পরে হঠাৎ গতকাল ২২ এপ্রিল সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে আরেকটি চিঠি দেয় ইসি। সেখানে বলা হয়েছে- সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যারাকেই থাকবে। তবে ‘অন কল’ এ তারা মাঠে নামবে।
ইসির এমন সিদ্ধান্তে বিএনপি থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়। তারা ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তারা বলছে কি এমন হলো যার কারণে ২৪ ঘণ্টা না যেতেই নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত বদল করলো। আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকারের চাপে ইসি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবে কাজ করছে। কারণ সেনাবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও সরকারের চাপে আবার ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে তা বোধগম্য নয়।’
সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানোর দাবি শুরু থেকেই করে আসছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও এ দাবি করে আসছিল।
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করে। বৈঠকে দুই ধরনের মত থাকলেও শেষমেষ সংখ্যাগরিষ্ট মতের ভিত্তিতে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত কেন তারা সেনা বাহিনী চেয়েও আবার বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী ভূমিকায় থাকে।তখন সরকারকে কোনো বিষয়ে চিঠি দিলে সেটা সরকার দিতে বাধ্য হয়।কিন্তু না দিলে তো সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তৎকালিন এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা ঐ সময় সেনা চেয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেনা দেয়নি। তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা বলেছি- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী দরকার। কিন্তু সরকার না দেয়ায় এর দায়ভার আমরা নিবো না। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনেরও অবস্থান পরিষ্কার থাকা দরকার।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। এখন কথা বলতে পারবো না।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম। জানতে চাইলে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘চিঠি একটিই দিয়েছি। সেনাবাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই আমরা জানিয়েছি।’
প্রথম তো ২১ এপ্রিল ইসি ২৬ তারিখ থেকে মাঠে সেনা চেয়ে চিঠি দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এমন চিঠি আমরা দেয়নি। আমরা বলেছি যে ঐ সময় থেকে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।’
তাহলে এখন কি বলেছেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলেছি- সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যারাকে থাকবে। ‘অন কল’ তারা মাঠে আসবে।’
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এমএম/এআর/ ঘ.)