logo ২৭ এপ্রিল ২০২৫
জনপ্রশাসনের পিরামিড কাঠামো ভেঙে তছনছ
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
১৭ এপ্রিল, ২০১৫ ১৪:০০:১৫
image

ঢাকা: প্রশাসনে পর্যাপ্ত পদ না থাকলেও গণহারে পদোন্নতি দিয়ে বেকায়দায় পড়েছে প্রশাসনযন্ত্র নিজেই। এর ফলে দৃশ্যত জনপ্রশাসনের আদর্শ পিরামিড কাঠামোটি ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে।


সম্প্রতি প্রশাসনযন্ত্রে ব্যাপক সংখ্যায় কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। তবে মজার ব্যাপারে হচ্ছে- পদোন্নতির পর পোস্টিং না দিয়ে বহু কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।


বর্তমানে সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তা ওএসডি আছেন, যাদের পেছনে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ প্রতি মাসে রাষ্ট্রের ব্যয় হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা।


অন্যদিকে ঢালাও পদোন্নতি প্রশাসনকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকতারা।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপ-সচিবের অনুমোদিত পদ আছে ৮৩০টি। কিন্তু পদোন্নতির পর উপ-সচিব পদে কর্মকর্তার সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে এক হাজার তিন শ’ ১৩ জন। যুগ্ম সচিবের পদ আছে ৪৩০টি।এর বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯২৮ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১০৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৯৯ জন। আর সচিব পদ রয়েছে ৫৪টি কিন্তু আছেন ৭০ জন।


এমন অবস্থায় সিনিয়র সহকারী সচিবের কাজ করছেন অসংখ্য উপ-সচিব। একইভাবে উপ-সচিবের কাজ করছেন অনেক যুগ্ম সচিব, আবার অতিরিক্ত সচিব হয়েও যুগ্ম সচিবের কাজ করতে হচ্ছে অনেক কর্মকর্তাকে।


ফলে কার্যবিধি অনুযায়ী শাখার প্রধান হিসেবে যুগ্ম সচিবেরা যেখানে আগে সচিবের কাছে নথি পাঠাতেন, সেখানে অনেকক্ষেত্রে এখন সেই কাজটি করছেন অতিরিক্ত সচিবেরা।


সব মিলিয়ে প্রশাসনে অনুমোদিত ১৪৩৭ পদের বিপরীতে কাজ করছেন দুই হাজার ৫৪০ জন কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭০ জন সচিব বা সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার মধ্যে তিন সচিব, ২৯৯ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৪৭ জন, ৯২৮ জন যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১০৭ জনসহ প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে আছেন।


এসব কর্মকর্তার কোন কাজ নেই, বসারও জায়গা নেই। তবে শিক্ষা ছুটি, সংযুক্তি, লিয়েনে ও পদায়নজনিত কারণে আরও তিন শতাধিক কর্মকর্তা ওএসডি আছেন। সব মিলিয়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় সাত শতাধিক। প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছে ও কমছে।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূল বেতন ৪০ হাজার টাকাসহ গাড়ি- বাড়ি, টেলিফোন সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে একজন সচিবের পেছনে সরকারের প্রতি মাসে ব্যয় হয় সর্বনিম্ন এক লাখ ১০ হাজার টাকার মতো।


এই হিসাবে ওএসডি তিন সচিবের পেছনে খরচ তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। একজন অতিরিক্ত সচিবের পেছনে খরচ হয় এক লাখ তিন হাজার টাকা। এই হিসাবে ৪৭ জন অতিরিক্ত সচিবের পেছনে ব্যয় হয় প্রায় ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।


একজন যুগ্ম সচিবের পেছনে খরচ প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। এই হিসাবে ১০৭ জন যুগ্ম সচিবের পেছনে ব্যয় প্রায় এক কোটি চার লাখ ৮৬ হাজার টাকা।


 এছাড়া, একেকজন উপ-সচিবের পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা। একজন সিনিয়র সহকারী সচিবের মূল বেতন সাড়ে ১৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার ৭০০ টাকা। সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে একজন সিনিয়র সহকারী সচিবের পেছনে বেতন-ভাতা বাবদ খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও অসংখ্য কর্মকর্তা ওএসডি ছিলেন।


২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬১৬ জন। তাদের পেছনে রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭০ টাকা।


এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্মসচিব বলেন, এ বর্তমান সরকার দুই আমলের পদোন্নতি একবারে দিতে গিয়ে এ সমস্যায় পড়েছে প্রশাসন। একবারে এতো জনকে পদোন্নতি দেয়ার ফলে প্রশাসনের পিড়ামিড ভেঙ্গে পড়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, পদে আছে বলেই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।তবে আমরা পদায়ন ধীরে ধীরে করবে।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবারে যে পদোন্নতি দেয়া হযেছে।এতে করে   কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে পড়ছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পদ ছাড়া পদোন্নতি দেয়ার কারণে প্রশাসনে এখন ভারসাম্যহীন অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পদ না থাকা সত্ত্বেও স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ও অনুগত কর্মকর্তাদের ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেয়ার কারণে জনপ্রশাসনে উপ-সচিব থেকে ওপরের স্তরের পদগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত কর্মকর্তা হয়ে গেছেন।


ফলে জনপ্রশাসনের আদর্শ পিরামিড কাঠামো ভেঙে গিয়ে মাথা মোটা হয়ে গেছে। আদর্শ নিয়মে নিচের স্তরের পদগুলোতে কর্মকর্তা বেশি থাকে আর ওপরের স্তরে কম হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের কাঠামো উল্টো পিরামিডের মতো হয়ে গেছে।


ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এইচআর/ এআর/ ঘ.)