ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘তামাশা’ বললেও এখন তিন সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের বিজয়ী করতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি নতুন অরাজনৈতিক সংগঠন।
তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব বুলুর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সিটি নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এর পরই গড়ে তোলা হলো এমাজউদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন সংগঠনের নেতারা এরই মধ্যে কয়েকদফা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিটি নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে খালেদাকে সহযোগিতাও করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজে সবকিছু মনিটরিং করছেন।বহু ভেবে চিন্তে প্রার্থীও বাছাই করেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নিজে।
শোনা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকার প্রার্থীদের জন্য নিজে প্রচারে নামবেন।
তবে গত তিন মাসের আন্দোলনে মাঠে না নামায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদার কাছেই ঘেষতে পারছেন না।
তিন মাসের স্বেচ্ছ্বায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে নিজের বাসায় ফিরে যাওয়ার পর ছয় দিন হলো এখনো খালেদা জিয়া বিএনপির কোনো স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেননি, এমনকি কাউকে ডাকেনও নি।
এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একধরণের অস্বস্তি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
গত ১৯ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল নির্বাচন।
তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না- এ নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। কারণ শুরুতে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ২৫ মার্চ দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে নির্বাচনকে তামাশা বলে উল্লেখ করা হয়।
দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন তথা সরকার। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে যে তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা গোটা দেশবাসীর ইচ্ছার সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
কিন্তু এই বিবৃতির পর থেকে দেখা যায় নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির হয়ে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে।
এখানেই থেমে থাকেননি পেশাজীবী নেতারা। শুরুতে শত নাগরিক কমিটির নেতারা মাঠে নামলেও পরে এতে যুক্ত হন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতারা। বিএনপিমনা ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে এটি গঠন করা হয় বলে জানা গেছে।
পরবর্তী সময়ে সব সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গঠিত হয় ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’। সিদ্ধান্ত হয় এই সংগঠনের ব্যানারে নির্বাচন করবে বিএনপি। যার আহ্বায়ক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ আর সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেকোনোভাবে বিএনপি সিটি নির্বাচনের ফল নিজেদের ঘরে নিতে চায়। যদিও নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে নানা শঙ্কা আছে। তবে শীর্ষ নেতারা আশা করছেন, নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থীরা ভালো করবেন। সেজন্য দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঢাকায় মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখনও কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারনি বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ডে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই একদিনের মধ্যে বিষয়টি প্রকাশ করা হবে বলে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।
নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাসী। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে, আমরাও জনগণের কাছে সরকারের অপকর্মের কথা বলার সুযোগ পাবো। আর কিভাবে বুঝলেন আমরা আওয়ামী লীগকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেব।”
(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/বিএন/জেবি/এআর/ ঘ.)