ঢাকা: রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার।রিভিউ খারিজের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরই তার ফাঁসি কার্যকর হবে। এব্যাপারে সকল আয়োজন চূড়ান্ত। প্রস্তুত ফাঁসি মঞ্চ এবং জল্লাদ।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ফাঁসি কার্যকর হলে বাবাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতে তার নিজের গড়া এতিমখানায় দাফন করা হবে।ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ওয়ামি বলেন, ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে শেরপুর সদর থানার বাজিতখিলা ইউনিয়নে নিজের গড়া এতিমাখানায় এবং এতিমখানার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই দাফন করা হবে বাবাকে।
কামারুজ্জামানের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমোরি মুদিপাড়া গ্রামে।
মঙ্গলবার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিাফোর ডটকমের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে ওয়ামি বলেন, ফাঁসি কার্যকর হলে তা আমার বাবার জন্য হবে শাহাদতের মর্যাদা। প্রথমে তিনি আমার দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফনের কথা বললেও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টান। বাড়িতে কবর না দিয়ে বাজিতখিল এতিমখানার পাশে তাকে সমাহিত করার কথা বলেছেন।
এদিকে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের মাটিতে দাফন করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। সোমবার তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। মঙ্গলবার সকালে তাদের জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার ও কামারুজ্জামানের স্ত্রীর বড়ভাই এ.এস.এম.নুরুল ইসলাম হিরু স্মারকলিপির মাধ্যমে এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের লাশ দাফন করতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই না ৭১র নরঘাতক কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের পবিত্র মাটিতে দাফন হোক। কামারুজ্জামানের দাফন প্রতিহত করতে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই নকলা, নালিতাবাড়িসহ শেরপুরে প্রবেশের চারটি পথে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস প্রশাসন নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। এ রায় বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে শেরপুর পূর্ণ কলঙ্ক ও দায়মুক্ত হবে।”
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ও ৭১র রণাঙ্গণের অকুতোভয় নায়ক এ.এস.এম.নুরুল ইসলাম হিরু ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেল থেকে শেরপুর সরকারি কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নির্বাচিত হন। এরপর দীর্ঘ সময় ওই সংগঠনের শেরপুর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ৭৫’র ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাকশাল যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েক বছর পর রাজনীতির পাট চুকিয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। শিক্ষানবীশ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে। প্রায় ৩৪ বছরের কর্মজীবনের ইতি টানেন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে। ১৯৯১ সালের গোড়ার দিক থেকেই স্থানীয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেন। এখন দায়িত্ব পালন করছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে।
এসব পরিচয়ের বাইরে নিজের আরেকটি পরিচয় রয়েছে হিরুর। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান তার আপন ভগ্নিপতি। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি। ৭৯ সালের দিকে পারিবারিকভাবে কামারুজ্জামানের সঙ্গে নিজের বোনের বিয়ের সময় বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু পরিবার বিয়ের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় নিজের ছোটবোন নুরুন্নাহার জোৎসনার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন হিরু। কামারুজ্জামানের সঙ্গে নিজের বোনের বিয়ের সেই ট্র্যাজিক অধ্যায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বোনের বিয়ের সময় মাকে বলেছিলাম, একদিন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে। তোমার মেয়ে বিধবা হবে। মা ও দুই ভাই সেদিন আমার কথা শোনেনি। এ কারণেই তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক আমি ছিন্ন করেছি। আদর্শের সঙ্গে আমি কোন সময়ই আপস করিনি।’
তবে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মামা নুরুল ইসলাম হিরুকে অগ্রণী ব্যাংকের চাকরিতে ঢাকায় ট্রান্সফার করেন আমার বাবা। ওই সময় তিনি আমাদের মিরপুরের সাংবাদিক কলোনির বাসায় প্রায় দুই বছর ছিলেন। পরে তিনি মিরপুর এলাকায় অনেক দিন বসবাস করেছেন। ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হওয়ার কারণে তিনি সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের অনুদান ও টাকা ও পয়সা পেয়েছেন। ওই টাকা হালাল করার জন্য তিনি বর্তমানে এসব প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ওয়ামি আরো বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধীর কথা উনি বলছেন। তার সাথে কার বিয়ে হয়েছে, উনার বোনেরই বিয়ে হয়েছে। উনি আমাদের আত্মীয় তা উনি কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না।
আমাদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক নেই এমন প্রচারণাও মিথ্যা উল্লেখ করে ওয়ামি বলেন, আমার মামারা চার ভাই। বাকি তিনজনের সাথে আপনারা যোগাযোগ করে দেখতে পারেন উনি কি সত্য বলছেন না মিথ্যা বলছেন।
কামারুজ্জামানের দাফন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনার কথা দেশ চলে না। শেরপুরও চলে না। আমাদের এলাকায় কোনো সমস্যা নেই।
গত ৬ এপ্রিল সোমবার সকালে কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে তাকে দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তভাবে বহাল থাকলো। এখন তার ফাঁসি কার্যকর সময়ের ব্যাপার।
(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এএ/জেবি)