logo ২৭ এপ্রিল ২০২৫
“নাগরিক ভাবনা: ভোট গেলে তাদের দেখা আর মিলে না”
ইনামুল হাসান, ঢাকাটাইমস
১৬ এপ্রিল, ২০১৫ ২৩:১২:১৭
image

ঢাকা: ঢাকাতে নির্বাচনী হাওয়া পুরোদমে বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন ঢাকাবাসী দুয়ারে। প্রার্থীরা ভোটারদের মনজয়ে মরিয়া। ঢাকা সিটিকে ভাগ করার পর এটা প্রথম নির্বাচন, তাই মানুষের চাওয়া-পাওয়াও যেন একটু বেশি।


নির্বাচন এলে দেশে একটি আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবার এটা যদি হয় রাজধানী, তাহলেতো আর কথাই থাকে না। অফিস আদালত থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, চায়ের দোকানে সব জায়গাতেই নির্বাচনী আলাপ। কে হবে নগরের নতুন পিতা? বড় দুই দলের কেউ, নাকি ছোট দলের। আবার যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তাদেরও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।


মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরা নগরীর আনাচে-কানাচে চষে বেড়াচ্ছেন ভোট পুঁজি করার জন্য। প্রার্থীরা  ভোট আদায়ের জন্য নানা আশ্বাস দিচ্ছেন।


এবারের সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বড় দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাই হবে। তবে সিটি নির্বাচনে দলের প্রভাবের কারণে অনেক সময় দলছুট অনেক ভালো প্রার্থীর জয় লাভ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক সময় দলের কারণে প্রার্থীর পূর্বের ভালো কাজের স্বীকৃতি ম্লান হয়ে যায় বলেও মন্তব্য কারো কারো।


নির্দলীয় নির্বাচন হলেও এর আগে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরে সিটি নির্বাচনে রাজনীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কয়েকজন মেয়র ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করার পরও দলীয় প্রভাবের কারণে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়।


সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেজেছে নতুন সাজে। রাস্তায়-রাস্তায় প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। শহরের অলিতে-গলিতে  মাইকের বিরক্তিকর শব্দ। চায়ের কাপে ঝড় তুলছে সিটি নির্বাচন। গল্প-আড্ডায় এখন নির্বাচনী আলাপই প্রাধান্য পাচ্ছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা। বাসাবোর চায়ের দোকানদার আবদুল জলিল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভোটের আগে সব প্রার্থীকে দেখা যাবে, ভোট শেষ হলে কাউকে আর খুঁজে পাওয়া য়ায় না।


আপনিতো ভোট দেন, নির্বাচিত মেয়রের কাছে আপনার চাওয়া কী? এমন প্রশ্নে আবদুল জলিল বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নাই। দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দিতে হয় তাই দেই।


ঢাকা দক্ষিণের মালিবাগের বাসিন্দা পলি বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন? তিনি বলেন, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে আমি ভোট দিতে চাই। যিনি এই শহরের জন্য কাজ করবেন তাকেই ভোট দেব।


নতুন নগর পিতার কাছে আপনি কী আশা করেন-এমন প্রশ্নে পলি বেগম বলেন, শহরে গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ঢাকাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করতে যিনি কাজ করবেন তাকে ভোট দেব।


তবে পলি বেগমের অভিযোগ, মেয়র হোক আর কাউন্সিলরই হোক নির্বাচনে জয়ের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।


যাত্রাবাড়ীতে বসবাসকারী চাকুরিজীবী মনির হোসেন আশা প্রকাশ করে বলেন, সিটি নির্বাচনে যেন সবাই অংশগ্রহণ করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন শহরের উন্নয়নে কাজ করে। 


রায়সাহেব বাজারে নাট-বোল্টের ব্যবসায়ী জি.এম. ফারুকের সাথে নির্বাচন নিয়ে আলাপে তার মনের কথা বের হয়ে আসে। তার দাবি, নির্বাচিত মেয়র যেন নিত্য প্রয়োজনীর জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখেন। যিনি নির্বাচিত হবেন শহরের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করবেন, সরকার কর যেন আর না বাড়ায় সেদিক খেয়াল রাখবেন, যানজট নিরসনে কাজ করবেন, রাজধানীকে পরিষ্কার রাখবেন-এসব প্রত্যাশা তার।


গুলিস্থানের রিকসা চালক মজিবর রহমান যিনি আলুবাজারে বসবাস করেন, তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মেয়রের কাছে আপনি কী আশা করেন। মজিব বলেন, আমরা গরির মানুষ, আমাদের তেমন কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই। আমরা যেন কাজ করে দুই বেলা দু-মুঠো ভাত খেতে পারি। যারা নির্বাচিত হয় তারা তাদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, জনগণের কথা ভাবার সময় তারা পায় না।


মৌচাকের আইক্রিম বিক্রেতা ইমন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি রাস্তায় আইক্রিম বিক্রি করে পেট চালাই। মেয়র বা কাউন্সিলর যে হোক তাতে আমার কিছুই আসে যায় না, তবে দেশে যেন হরতাল-অবরোধ আর না হয়, তাহলে আমাদের পেটে লাথি মারা হবে। আমাদের পরিবার না খেয়ে থাকবে। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করে, যদি আমার গাড়িটা পুড়িয়ে দেয়। তাহলে আমার সব শেষ।


গুলিস্তানে কথা হয় বাসচালক বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে, যিনি বাস করেন পুরান ঢাকার মালিটোলায়। বিল্লাল হোসেন বলেন, নির্বাচন এলে বলে বাবা ভাই বলে ভোট চায়। নির্বাচন শেষে তাদের আর চোখে দেখা যায় না।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র সোহেল রানার প্রশ্ন করা হয়  মেয়র প্রার্থীর কাছে আপনার প্রত্যাশা কী? তিনি বলেন, ঢাকাকে নতুন করে সাজাতে হবে। ফুটপথগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। বিদ্যুৎব্যবস্থার উন্নতি সাধন, পানির সমস্যার সমাধান ও গ্যাসের ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে তারা যে প্রতিশ্রুতি দেন এর কোনোটাই পূরণ হয় না।


তাকে বলা হয়, কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন? তিনি বলেন, শেষ মেশ মন্দের ভালোকে ভোট দিতে হবে।


সাধারণ লোকের পাশাপাশি সবার মনের বাসনা, নির্বাচনের মাধ্যমে এমন  লোক ঢাকার নতুন পিতা হবেন, যিনি রাজধানীতে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করবেন। আমাদের পাশের দেশ কলকাতা শহর আমাদের থেকে অনেক পুরানো। কলকাতা পারলে ঢাকা কেন পারবে না?


(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/ইনামুল/জেবি)