ঢাকা: নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের ব্যয়সীমা বেধে দিয়েই খালাস!
কোন প্রার্থী কতো ব্যয় করছে তা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়ার কোনা বালাই নেই কমিশনের।
নির্বাচন কমিশনের সে রকম কোনো ম্যাকানিজমও নেই।তাই প্রার্থীদের দেয়া হিসাব বিবরণীর ওপরই ভর করতে হচ্ছে কমিশনকে।
এ ব্যাপারে যথাযথ আইন থাকলেও এর প্রয়োগে রয়েছে মারাত্মক দুর্বলতা। মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় বিবরণীর অন্যতম একটি খাত হচ্ছে পোস্টার ব্যয়।
এই একটি খাত বিশ্লেষণ করলেই প্রার্থীদের পোস্টার ব্যয় নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়ার সুযোগ থাকছে।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের টাইম টু টাইম জমা দেয়া হলফনামা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ঢাকা উত্তরের প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীর ৫০ হাজার পোস্টারে ব্যয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ টাকা।অর্থাৎ তার প্রতিটি পোস্টারে খরচ হয়েছে ছয় টাকা করে।
ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তার চার লাখ পোস্টারে ব্যয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পোস্টারে তার ব্যয় হয়েছে তিন টাকা করে।
আবদুল্লাহ আল ক্বাফী আর নাদের চৌধুরীর পোস্টার প্রতি খরচ দেখানো হয়েছে দুই টাকা করে, তারা দুজনেই এক লাখ করে ছেপেছেন।
জোনায়েদ সাকি এবং বাহাউদ্দিন আহমেদের পোস্টার প্রতি ব্যয় হয়েছে এক টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে সাকি এক লাখ ও বাহাউদ্দিন আহমেদ দুই লাখ পোস্টার ছেপেছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের পোস্টার প্রতি ব্যয় হয়েছে এক টাকা করে। আনিসুল হক তিন লাখ পোস্টার ছেয়েছেন এবং এতে ব্যয় হয়েছে তিন লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রেসের মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রতি পাঁচ হাজার পোস্টার ছাপতে কাগজের দাম আসে সাড়ে সাত হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ আরো আড়াই হাজার টাকা। এ হিসাবে প্রতিটা পোস্টারে পেছনে খরচই আছে কমপক্ষে দুই টাকা।
মাহী বি চৌধুরীকে পোস্টার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেসের এই মালিক বলেন, কেউ গলাকাটা দাম নিয়েছেন মাহী বি চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, একটা পোস্টারের মূল্য কখনোই ছয়টাকা হতে পারে না।
আরেক প্রেস মালিক বলেন, যেসব প্রার্থী পোস্টার প্রতি এক টাকা করে ব্যয় দেখিয়েছেন সেটাও অসম্ভব ব্যাপার। আর প্রেস মালিকদেরতো এটা মৌসুম। তারা ব্যবসা না করলে চলবে কি করে।অর্থাৎ প্রার্থীরা যে ব্যয় দেখিয়েছেন তা কোনো ভাবেই সুষ্ঠু ধারার হিসাব নয়।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা দায়সারা একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবখানা এমন যে নির্বাচনী ব্যয়ের দেখাতে হবে তাই দেখানো হয়।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
তিনি আরো বলেন, দেশ এখন ডিজিটাল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকেও ডিজিটাল হতে হবে।
এখন ঝড় বৃষ্টির মৌসুম, প্রার্থী একবার পোষ্টা লাগালে তা ঝড়ে নষ্ট হচ্ছে আবার তাকে পোস্টার লাগাতে হচ্ছে। এভাবে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তাকে আবারও পোষ্টার লাগাতে হয়। এতে নির্বাচনি খরচও বেড়ে যায়। যদি ডিজিটাল পোষ্টার হতো তাহলে প্রার্থীর প্রচারণার সুবিধা হতো।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অব্যশই তার প্রচার-প্রচারণার জন্য নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করা উচিত। অন্যদিকে ইসির এমন লোকবল নেই যে তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রার্থীরা তাদের খরচ নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী করতে হবে।কেউ যদি কম কিংবা বেশী দেখায় তাহলে আমরা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
নির্বাচনি আইন পরির্বতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। শ্রীঘ্রই এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নির্বাচনে ভোটার হিসেবে ঢাকা উত্তরে মেয়রপ্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৩০ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে পারবেন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আর কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যয়সীমা এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
পোস্টার ছাপানোর পাশাপাশি অন্য প্রচারণা, পরিবহন, পথসভা-ঘরোয়া সভা, নির্বাচনী ক্যাম্প, অফিস খরচ, এজেন্ট ও কর্মীদের খরচ, আবাসন ও প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ এই টাকা খরচ করতে পারবেন প্রার্থীরা। এছাড়া প্রার্থীর ব্যক্তিগত ব্যয়ও নির্ধারিত রয়েছে।
নির্বাচনী ব্যয় এবং কোথা থেকে সেই টাকা এসেছে তার বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হবে প্রার্থীদের। প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী 'স্বচ্ছতার স্বার্থে' নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।
(ঢাকাটাইমস/ ২৫ এপ্রিল/ টিএ/ এআর/ ঘ.)