ঢাকা: সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি।
ভোট বর্জনকে পরবর্তীতে কীভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হতিয়ারে পরিণত করা যায় তা নিয়েও ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড।
এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে।ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা যতই হোক না কেন বিএনপি মনে করছে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তই সঠিক।
আগামীতে আন্দোলনের সময় এই সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয়- সে বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরার একটি সুযোগ তৈরি হবে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের অনাগ্রহের বিষয়টি জাতির সামনে ফুটে উঠলেও নির্বাচনকে বিতর্কিত করারই যে ছিল বিএনপির প্রধান টার্গেট সে বিষয়টিও জোরেসোরে আলোচনায় রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনের সময় গড়ে তোলা সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সিটি নির্বাচনের আগে তিন মাসের টানা আন্দোলনের অভিজ্ঞতাসহ দলের সাংগঠনিক অবস্থান বিচার বিশ্লেষণ করে বিএনপি ধীরে চলো নীতির পথ ধরেছে।
এছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এখন নতুন করে শুরু করতে চায়।সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করার আগে দলকে ঠেলে সাজানোর বিষয়টিও সামনে আসছে।
এছাড়া সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং লেখালেখিসহ মন্তব্য প্রতিবেদনকে তারা আমলে নিতে চাইছে।অর্থাৎ ভুলত্রুটি শুধরে বিএনপি নতুন করে শুরু করতে চাইছে।
এর আগে পান থেকে চুন খসলেই যে দল কর্মসূচি দিতো এবং ভোট বর্জনের পরও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছিল যে বিএনপি হয়তো ফের হরতাল-অবরোধ দিয়ে বসবে। কিন্তু না বিএনপি সে দিকে যায়নি। এ দিক থেকে বিএনপি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাহবা পাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছে, বিএনপি হয়তো ভাবছে, কঠোর কর্মসূচির পথে গেলে ‘নির্বাচনে দৃশ্যমান অনিয়ম’ চাপা পড়ে যাবে। উল্টো কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতা হলে বিএনপিকে আবারো সমালোচনার মুখে পড়বে।
তবে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে শিগগিরই খালেদা জিয়া বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এমনটা শোনা যাচ্ছে।যদিও এখনো বৈঠকের দিনক্ষণ চুড়ান্ত হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন বর্জন করলেও এ নিয়ে সরকারি মহলের বক্তব্য, দেশি বিদেশী ব্যক্তি-সংগঠনের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপির ধারণা, নির্বাচন সুষ্ঠু বলে ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও সরকার এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই।
বিএনপি ও জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ নেতা এই মুহূর্তে হরতাল বা এই জাতীয় কোনো কর্মসূচির পক্ষে নয়। আগামী ৫ মে থেকে শুরু হচ্ছে “ও” এবং “এ” লেভেল পরীক্ষা।বিষয়টিও ভাবনায় রেখেছে বিএনপি।
এর আগে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা ছাড়াও আগের দফায় “ও” এবং “এ” লেভেল পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছিল। এ বিষয়গুলো ভাবনায় রেখেই অগ্রসর হতে চাইছে বিএনপি।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীর ভুমিকায় হাইকমান্ড হতাশ। নির্বাচনের সুযোগে নেতাকর্মীদের অনেকে প্রকাশ্যে আসলেও ‘ভোট কারচুপি’ ঠেকাতে ছিল না তেমন তৎপরতা। তাই কর্মসূচির আগে সংগঠন গোছানোর দিকে মন দেয়ার চিন্তা চলছে। শিগগিরই এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
বিএনপির গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটি ও জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়া আবারো সামনে আসতে পারেন। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও তাকে এ পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তাই বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দলের সাংগঠনকি কার্যক্রম জোরদার করার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। শিগগিরই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।তাতেই সবকিছু চুড়ান্ত হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার ক্ষেত্রে ‘ও’ লভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।যা একমাসের বেশি সময়ধরে চলবে। এরমধ্যে কিভাবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যাবে সেটা দেখা হচ্ছে।”
তবে এবার আন্দোলন শুরু করতে কিছুটা সময় নেয়া হতে পারে জানালেন বিএনপিপন্থি এই আইনজীবী নেতা।
(ঢাকাটাইমস/০২মে/বিইউ/এআর/ ঘ.)