logo ২৬ এপ্রিল ২০২৫
সাংগঠনিক দুর্বলতাই ডুবিয়েছে বিএনপিকে
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৯ এপ্রিল, ২০১৫ ১৯:০১:৩৫
image

ঢাকা: তিন মাসের টানা আন্দোলনের পর হঠাৎ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং তড়িঘড়ি করে ভোটের দিন বর্জনের ঘোষণার পর হঠাৎ বিএনপির থ-মেরে যাওয়া নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা মতের ও পথের লোকদের সমন্বয়ে গঠিত বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে হবে প্রথম।


পাঁচ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে গত তিন মাসের টানা হরতাল-অবরোধে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে ভীষণভাবে।


গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক কাঠামো যে লেজে-গোবরে অবস্থা তা সবারই জানা।


কেননা ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে(সকাল-দুপুরে) বিএনপির কোনো অ্যাজেন্টকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।


চোখে পড়েনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর লোকজনকেও।যত মামলাই থাকুক না কেন একটি নির্বাচনে বিএনপির মতো একটি দলের লোক কেন্দ্রে পাওয়া যাবে না এটা অবিশ্বাস্য।


প্রশ্ন উঠেছে-বিএনপি চেয়পারপারসন কাদের উপর ভরসা করে বলেছিলেন যে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা কেন্দ্র পাহারা দেবেন? প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা মহানগরির দায়িত্ব যার উপর দেয়া হলো নতুন করে সেই মির্জা আব্বাস কেন পলাতক?


দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে বার বার ক্ষমতাসীন দলের কৌশলের কাছে হেরে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারের কোনো কৌশলকেই মোকাবেলা করে ‘উদ্দেশ্য’ হাসিল করতে পারছে না রাজপথের এই বিরোধী দলটি।


বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ গতকাল ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপির ‘নাজুক’ সাংগঠনিক অবস্থা দেখে এমনটাই মনে করছেন তারা।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীই মাঠে ছিল না।অথচ দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ভোটের দিন সকল নেতাকর্মীকে কেন্দ্র পাহারা দিতে বলেছিলেন। তিনি এও বলেছেন, কাউকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। কিন্তু দলীয় প্রধানের এমন বক্তব্যেও ‘চেতন’ ফিরে পায়নি নেতাকর্মীরা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোনো কেন্দ্রেই ছিল না বিএনপির এজেন্ট। এমন ঘটনায় রাগে- দুঃখে-ক্ষোভে বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম রাজনীতি থেকেই অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।


এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। কিন্তু নির্বাচনের পুরো সময়টাতে এই দুই নেতাকে দেখা যায়নি। মির্জা আব্বাস নিজেই মেয়র প্রার্থী কিন্তু তিনি ছিলেন আত্মগোপনে। আর সোহেলকে ‘হেরিক্যান’ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি সিটি নির্বাচনে।


শুধু তাই নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি দলটি। এনিয়ে তাদের মধ্যে ছিল না কোনো পরিকল্পনাও। এসব কিছুর জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ভোট নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। কোনো এজেন্ট ছিল না। এভাবে নির্বাচন করা যায় না। সাংগঠনিক পরিকল্পনা বলতে কিছুই ছিল না বিএনপির।’


তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য অনেকে দলের কাউন্সিল না হওয়াকেও দায়ী করছেন। সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। এরপর ২০১৩ সালের ৯ মার্চ কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলেও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানসহ বিভিন্ন কারণে তা স্থগিত করা হয়। এরপর কেটে গেছে অনেক দিন। এখন কাউন্সিলের কোনো আওয়াজ নেই। এর দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছেন দলের নেতারা।


জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নানশাহ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক শক্তি অবশ্যই আছে। কিন্তু সরকারী যন্ত্র যেভাবে অন্যায় নির্যাতন-নিপীড়ন করছে তাতে আমরা কী করবো। নেতাকর্মীদের ঘর থেকেই বের হতে দিচ্ছে না। দলের কাউন্সিল ঠিক সময়েই হবে। এখন তো সেই পরিবেশ নেই।’


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে কী হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমাদের কোনো এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়নি। কি ভাবে তারা কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সরকারী দলের পক্ষে কাজ করেছে। এসব তো আপনারাই লিখেছেন।’


বিএনপি সাংগঠন ব্যর্থতা ও দুর্বলতার চিত্র দেখা যায় দলটির ঢাকা মহানগর কমিটির দিকে তাকালে।


৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধের পাশাপাশি দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচি দিয়ে ঢাকার রাজপথে কোনো কিছুই করতে পারেনি নেতাকর্মীরা।


৫ জানুয়ারির আগে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিরসহ বিরোধী জোটের আন্দোলন পুরোপুরী ব্যর্থ হয়। যার ফলে খোকা-সালামকে বাদ দিয়ে ‘মাস্টার প্লান’ করে ঢাকা মহনগরের দায়িত্ব দেয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে। কিন্তু টানা তিনমাসের আন্দোলনে সেই ‘মাস্টার প্লানের’ ছিটে ফোঁটাও পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া আব্বাস সোহেলকে নতুন কমিটি গঠনের ২ মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সকল ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। মাত্র ৩৭টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন হয়েছে। এনিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ।


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সরকার যেভাবে অপশাসন চালাচ্ছে তাকে বিরোধী কর্মীরা মাঠেই নামতে পারছে না। এখানে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নেই। বরং বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবেই সব কিছু মোকাবেলা করছে। সরকার বরং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। এসব বেশি দিন চলবে না।’


(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এমএমে/ এআর/ ঘ.)