logo ২৬ এপ্রিল ২০২৫
ভালো নেই তারা
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০৮ মে, ২০১৫ ০০:২০:০১
image

ঢাকা: দেশের ছয় সিটি করপোরেশনের মেয়ররা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই মেয়র পদ থেকে ছিটকে পড়েছেন।


যারা এখনো আছেন তারা সরকারি দলের সঙ্গে ম্যানেজ করে টিকে আছেন! আবার যারা তাল মেলাতে পারছেন না বা নিজেকে আপোসহীন মনে করছেন তারা পালিয়ে আছেন।সিলেট এবং গাজীপুরের মেয়র রয়েছেন জেলে।


রাজশাহীর মেয়র ও নগর যু্বদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে গতকাল বৃহস্পতিবার সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যাসহ বিস্ফোরক আইনে ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পলাতক রয়েছেন।


সিটি করপোরেশনেও অফিস করছেন না তিনি। তবে তিনি অদৃশ্য থাকলেও গোপন স্থান থেকে অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন।


সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে অভিযুক্ত হওয়ার পর তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ মামলায় গত ডিসেম্বরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠান।   


কারাগারে অসুস্থ আরিফুল হক ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আরিফুল হক চিকিৎসাধীন থাকলেও তিনি বেশ আরাম আয়েশেই রয়েছেন। নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তিনি। 


গাজীপুর সিটির মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন গাজীপুর সিটি মেয়র এম এ মান্নান।


তবে খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়ররা সরকারের সঙ্গে ম্যানেজ করে নিজেদের পদ বাঁচিয়ে রেখেছেন। পদ হারানোর ভয়ে এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তারা দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন না। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরা মেয়রদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তারা এড়িয়ে চলছেন।


বিগত মহাজোট সরকারের সময় রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, গাজীপুর ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সব কটি সিটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তারা নিজ নিজ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বও গ্রহণ করেন।


গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকভাবেই চলছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারি বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করে।


রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা, সন্ত্রাস, পেট্রলবোমা মেরে সাধারণ মানুষ হত্যাসহ নানা রকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়। আসামি করা হয় একাধিক সিটি মেয়রকে। তার পর থেকেই পালিয়ে বেড়ান সিটি মেয়রদের অনেকে।


খুলনা সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানুয়ারিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় থেকে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে তিনি বিএনপির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে পারেননি। অবশ্য সুস্থ হয়ে বর্তমানে তিনি খুলনায়ই অবস্থান করছেন এবং সিটি করপোরেশনে অফিস করছেন।


কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু নিজের মেয়র পদ বাঁচিয়ে রাখতে যোগ দিচ্ছেন না কোনোরকম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।


কুমিল্লার স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দলের কর্মসূচিতে একেবারেই থাকছেন না প্রভাবশালী এই মেয়র। তিনি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যস্ত। সূত্র জানায়, কুমিল্লা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। কিছু দিন আগে তাদের এ বিভক্তি দূর হয়েছে। এরপর দলীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল সিটি মেয়র এখন সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন দলীয় কর্মসূচিতে। কিন্তু তা আর হয়নি।


বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল রাজনীতির ময়দানে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। বরিশালের বিএনপি রাজনীতিতে তাকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে একবারও দেখা যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।


স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বরিশালের মেয়র কামাল সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি চান না তার মেয়র পদ কোনোভাবেই হাতছাড়া হোক।


স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যদি কেউ সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।


কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বরখস্ত করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।


মন্ত্রণালয় এককভাবে এটি করতে পারে না। এটি গণতন্ত্র বিকাশের অন্তরায়। জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত।


(ঢাকাটাইমস/৮মে/এমএম)