ঢাকা: রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হতে চাইছেন এক সময়ের আলোচিত-সমালোচিত সাভারের তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। প্রায় তিন বছর রাজনীতির বাইরে থেকে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন এই রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের ডাকের অপেক্ষায় আছেন সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ছিটকে পড়া আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংসদ।
তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘রাজনীতি আমার রক্তে মিশে আছে। রাজনীতির বাইরে আমি অন্য কিছু ভাবছি না। রাজনীতিতে এখন সক্রিয় না হলেও সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি, দেখছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য আগেও ছিলাম। এখনও আছি। আশা করছি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। উপরের ডাক পেলেই আবার ফিরে আসবো রাজনীতির মাঠে, সক্রিয় হবো।’
এখন স্ত্রীকে নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটে মুরাদ জংয়ের। স্ত্রীর ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তিনমাস পর পর থাইল্যান্ডে যেতে হয় সাভারের এক সময়ের আলোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতাকে।
ক্যান্সারের মরণ ছোবল থেকে বাঁচতে ব্যাংকক হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেমো দিতে হয় মুরাদ জংয়ের স্ত্রীকে।
গত আড়াই বছর স্ত্রীকে সময় দিচ্ছেন উল্লেখ করে মুরাদ জং জানান, ‘১৫টি বছর স্ত্রীর সঙ্গে ঘর সংসার করেছি। রাজনীতির কারণে এর আগে স্ত্রীকে সময় দেয়া হয়নি। তবে এখন স্ত্রীর সেবা করতে পারছি। এই জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর রাজনীতির মাঠ থেকে হাওয়া হয়ে যান মুরাদ জং। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রানা প্লাজা ধসের পর পরই ভবনমালিক সোহেল রানার সাথে মুরাদ জংয়ের সখ্যতার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পরই রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তৌহিদ জং মুরাদ।
অভিযোগ ওঠে, মুরাদ জংয়ের ছত্রছায়ায় সোহেল রানা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াত। মুরাদ জংই ছিল সোহেল রানার আশ্রয়স্থল।
রানা প্লাজা ধসের পর ঘটনাস্থল ও ক্ষতিগ্রস্থদের দেখতে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই সোহেল রানাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার বিষয়টি জানার পর ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী।
সাভার পরিদর্শনের যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি আসার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মুরাদ জং। তারপর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন এই নেতা।
এসব বিষয়ে মুরাদ জং বলেন, ‘রাজনীতি করেছি। আমার হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছে। অনেককেই তো আমি কাছে টেনে নিয়েছি। কিন্তু তারা যদি কোনো অপকর্ম করে সেই দায়ও কি আমার ওপর বর্তাবে? রানাপ্লাজা ধসে পড়েছে। আমি কি রানার সঙ্গে সম্পর্ক করার আগে জিজ্ঞাস করবো যে, রানা প্লাজা ঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে কি না। বা ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা হয়েছে কিনা। এসব কি কেউ করে। কিন্তু এসব ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের দাবিতে একবার সাভারে সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ফাঁসি দেয়ার জন্য দুইটি ফাঁসির মঞ্চ বানানো হয়। সেটি অনেক সুন্দর করে বানানো হয়েছে। সেই জন্য আমি সোহেল রানাকে কাছে ডেকে চুমু খেয়েছিলাম। সেটা কি আমার অপরাধ? সেই ছবি বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়।’
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১৬টি দিন উদ্ধার কাজে জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা কেউ বলেনি।
সবকিছুর শেষে আল্লাহ তো একজন আছেন। সৃষ্টি কর্তা দেখেছেন আমি কি করেছি।
আমি যদি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে আমার শাস্তি হোক।কিন্তু আমি কোনো অন্যায় না করলে তো আমি প্রতিদান ফিরে পাবই।’
(ঢাকাটাইমস/৯মে/এমএম/এআর/ ঘ.)