logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
আবদুর রাজ্জাকের দৌড় এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা
মাসুদ কামাল
২৬ আগস্ট, ২০১৫ ০০:১৫:০৩
image

সেদিন ছিল সোমবার, ২০ জুলাই। সকালে অনলাইনে একটা রিপোর্ট দেখে রীতিমতো চমকে গেলাম। বাংলা ট্রিবিউন নামে এই অনলাইন পোর্টালটি আমি নিয়মিত দেখি। ওখানে যারা লেখালেখি করেন, তাদের অনেকেরই লেখার আমি ভক্ত। বেশ গোছানো এই অনলাইন মিডিয়ার একটা রিপোর্টে আমার চোখ আটকে গেল। নওগাঁর এক লোক, নাম আবদুর রাজ্জাক, নাকি প্রতিদিন ৮৪ কিলোমিটার দৌড়ে অফিস করেন! বাড়ি থেকে অফিসে যেতে ৪২ কিলোমিটার এবং ফিরে আসতে ৪২ কিলোমিটার, এভাবে প্রতিদিন ৮৪ কিলোমিটার যান তিনি দৌড়ে। ঘটনাটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। শুরুতেই আমি যা ভাবলাম তা হলো, এটা যদি সত্য হয়, তাহলে এ নিয়ে সবিস্তার একটা রিপোর্ট হতে পারে। আরও ডিটেইলে যাওয়া যেতে পারে। রিপোর্টটি টেলিভিশনে করা গেলে এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়তো আরও ভালোভাবে পাওয়া যাবে।


সে অনুযায়ী আমি আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। বিকালে অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলাম। কান্ট্রি ডেস্কের একজন জানালেন, নওগাঁ প্রতিনিধি তাকে জানিয়েছেন ঘটনাটি নাকি সত্য নয়। আমরা বলার পর তিনি ওই আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। রাজ্জাক সাহেব তাকে জানিয়েছেন, তিনি একসময় মাঝেমধ্যে দৌড়ে কিছুদূর যেতেন। কিন্তু এখন যাওয়ার দরকার পড়ে না। কারণ তার অফিস এখন বাড়ি থেকে সাড়ে তিন-চার কিলোমিটার দূরে। এই দূরত্ব তিনি হেঁটেই যান, মাঝেমধ্যে রিকশাতেও যান।


বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। নতুন একটা অনলাইন মিডিয়া হয়ত কিছুটা উত্তেজনার বশে, কিছুটা আলোচনায় আসার লক্ষ্যে এ ধরনের সেনসেশনাল একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এ রকম একটা ভাবনা নিয়ে বিষয়টা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ঝামেলা পাকালো দৈনিক প্রথম আলো।


গত ১৫ আগস্ট তাদের ‘ছুটির দিনে’ ম্যাগাজিনে সেই আবদুর রাজ্জাককে নিয়েই ফিচার করল তারা। একই সাবজেক্ট, একই প্রকাশভঙ্গি। লেখার মধ্যে তথ্যগত কিছু পার্থক্য থাকলেও মোটের ওপর বিষয়বস্তু একই: একজন লোক প্রতিদিন অবিশ্বাস্য একটা দূরত্ব দৌড়ে অফিসে যায়, আসে। এবার আর বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ থাকল না। প্রথম আলো দেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত দৈনিক। সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে এদের আত্মপ্রচারও একেবারে কম নয়। আমার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন কাজ করেন এখানে। এবার আমি দুটি রিপোর্টই একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখতে লাগলাম। একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার প্রায় এক মাস পর প্রথম আলোর মতো পত্রিকা সেটি কেন আবার প্রকাশ করতে গেল?


খুঁটিয়ে পড়তে গিয়ে দেখলাম, বিষয়বস্তু এক হলেও বাংলা ট্রিবিউন এবং প্রথম আলোর দুই রিপোর্টের মধ্যে বেশ কিছু গরমিলও কিন্তু রয়েছে। ট্রিবিউনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিদিন ৮৪ কিলোমিটার দৌড়ে অফিস করেন রাজ্জাক।’ ৮৪ কিলোমিটার মানে হচ্ছে যেতে ৪২ এবং আসতে ৪২ কিলোমিটার। প্রথম আলো যেহেতু দিন কয়েক পর রিপোর্টটি করেছে, তাই তারা ভাবলেন দূরত্ব বাড়িয়ে না দিলে তাদের ইজ্জত থাকে না। শিরোনাম করলেন, ‘৪৫ কিলোমিটার দৌড়ে অফিস করেন আবদুর রাজ্জাক!’ যাওয়া আসা মিলিয়ে এদের হিসাবে দাঁড়ায় ৯০ কিলোমিটার!


দুই প্রতিবেদনে আরও কিছু পার্থক্য রয়েছে। ট্রিবিউনে তার বয়স ৪২ বছর, আর প্রথম আলোতে ৪০ বছর। ট্রিবিউনের রিপোর্টার বাবুল আখতার রানা জানাচ্ছেন আবদুর রাজ্জাক নওগাঁর রাজস্ব শাখায় ভ‚মি অফিসের এমএলএসএস’র চাকরি করেন। আর প্রথম আলোর প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলছেন, আবদুর রাজ্জাক ‘তহসিল অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে চাকরির আবেদন করেন এবং চাকরি হয়ে যায়।’ অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি হয়ে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই এমএলএসএস পদে কাজ করবেন না।


আসলে আবদুর রাজ্জাক ঠিক কত দূরত্ব দৌড়ে যান প্রতিদিন? এ নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্টটিতে কিছু জিগজ্যাগ পাজলের মতো করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আবদুর রাজ্জাক জানান, চাকরিতে ঢোকার পর তার প্র্যাকটিসের আর সময় হাতে থাকে না। বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। বাস বিভিন্ন স্টপেজে থামতে থামতে যায়। সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। তিনি সিদ্ধান্ত নেন দৌড়েই অফিসে যাবেন। এতে একই সঙ্গে তার অনুশীলন হয়ে যাবে। যা বলা, তাই কাজ। তিনি আড়াই ঘণ্টায় অফিসে যান। তিন ঘণ্টায় ফিরে আসেন। দুই বছর পরে তাকে একই উপজেলার ভরতিডাঙ্গা তহসিল অফিসে বদলি করা হয়। বাড়ি থেকে দূরত্ব ছিল ৪৭ কিলোমিটার। সেখানে তিন মাস একইভাবে দৌড়ে গিয়ে চাকরি করেছেন। এরপর তাকে নওগাঁর সদর উপজেলার কীর্তিপুর অফিসে বদলি করা হয়। বাড়ি থেকে দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। দূরত্ব কমলেও আবদুর রাজ্জাকের দৌড় থামেনি। তিনি উল্টো পথে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে একইভাবে অফিস করেন।’


তাহলে সব মিলিয়ে কি হলো? এক সময় তিনি ৪৫ কিলোমিটার যেতেন। তারপর আবার ৪৭ কিলোমিটারও যেতেন। আর সবশেষে যখন তার অফিসের দূরত্ব বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার হয়ে গেল, তখনও তিনি উল্টো পথে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে অফিস করেন! এত কিছু বলার পর রিপোর্টের একেবারে শেষ দিকে গিয়ে বললেন, ‘গত বছর তিনি একটি দুর্ঘটনার শিকার হন। একটি ট্রাকের পাশ দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সময় পাথরকুচি এসে পড়ে তার চোখে। চিকিৎসা করছেন। কিন্তু তেমন উন্নতি হয়নি। এখনো চোখে ঝাপসা দেখেন। এ জন্য অনুশীলন করতে পারছেন না।


আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘চোখ ঠিক হলেই আমি আবার ৪০ কিলোমিটার দৌড়েই অফিস যাওয়া-আসা শুরু করব।’ এর মানে তিনি এখন আর দৌড়ান না। তাহলে দাঁড়ালটা কি? শিরোনামে যে লেখা হলো ‘৪৫ কিলোমিটার দৌড়ে অফিস করেন আবদুর রাজ্জাক!’ সেটা কিভাবে জাস্টিফাইড হলো? এতটা পথ দৌড়ে অফিস তো করেন না, হয়ত এক সময় করতেন। তবে বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার অবশ্য এত প্যাঁচগোচের মধ্যে যাননি। তিনি এমনভাবে রিপোর্টটি লিখেছেন যে, আবদুর রাজ্জাক বুঝি এখনো প্রতিদিন এ রকম ৮৪ কিলোমিটার দৌড়েই অফিসে যাতায়াত করেন। রিপোর্ট দুটি পড়ার পর আমার মধ্যে কিছু প্রশ্ন দেখা দিল। কিছু প্রশ্ন রিপোর্টটির যথার্থতা নিয়ে, আর কিছু নৈতিকতা নিয়ে।


প্রথমে যথার্থতা বা বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে বলি। আবদুর রাজ্জাক যে দূরত্ব প্রতিদিন অতিক্রম করেন বলে দুই সাংবাদিকই দাবি করেছেন, সেটি আসলে একটা ম্যারাথন দৌড়ের দূরত্ব। আন্তর্জাতিক নিয়মে ম্যারথনের দূরত্ব হচ্ছে ৪২.১৯৫ কিলোমিটার। ট্রিবিউনের হিসাব অনুযায়ী আবদুর রাজ্জাক দিনে দুইবার এই দূরত্বই অতিক্রম করেন। আর প্রথম আলো তাকে উঠিয়েছেন আরও উপরে, বলছে- না, দিনে দু’বার করে সে আরও তিন কিলোমিটার বেশি দৌড়ায়!


আজকাল গুগলে গেলে প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। ম্যারাথন সম্পর্কে কিছু ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করলাম। না, ম্যারাথন কোনো সহজ কাজ নয়। শারীরিক গঠন, খাবার দাবার, কঠোর অনুশীলন, বয়স, এ রকম আরও অনেক উপাদান অনুক‚লে থাকলেই কেবল একজন মানুষের পক্ষে ম্যারাথন দৌড়বিদ হওয়া সম্ভব। এই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যারাথন দৌড়বিদদের তালিকার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম, শীর্ষস্থানীয় চারজনই কেনিয়ার অধিবাসী। পঞ্চমজন ইথিওপিয়ার। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম আবার কেনিয়ার, নবম ও দশম ইথিওপিয়ার।


অর্থাৎ আফ্রিকার দেশগুলোর এক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ, যেখানে স্বাস্থ্যকর খাবার দাবারের অফুরন্ত ভাণ্ডার, দৌড়বিদদের জন্য অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, তাদেরও কোনো পাত্তাই নেই। এই যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দৌড়বিদগণ, এরাও কিন্তু দিনে দু’বার করে ম্যারাথন দৌড়ের কথা চিন্তাও করে না। অথচ ঢাকা ট্রিবিউন এবং প্রথম আলো জানাচ্ছে- আমাদের আবদুর রাজ্জাক নাকি দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন এই দুই ম্যারথনের প্র্যাকটিস!


ম্যারাথনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- এতে মানুষের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হতে থাকে, ডিহাইড্রেশন হয়। তাই ম্যারাথন দৌড়বিদরা তাদের সঙ্গে পানির বোতল রাখেন, কিছু সময় পরপর দৌড়াতে দৌড়াতেই পানি পান করতে থাকেন। তারপরও তাদের শরীরে পানির পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাদের চেহারার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়, কেমন পেটানো শরীর তাদের, শরীরে পানি তেমন নেই-ই।


আমাদের আবদুর রাজ্জাকের ব্যাপার স্যাপার সম্পূর্ণই আলাদা। ছবিতে যতটুকু দেখা যায়, মোটামুটি থলথলেই তার দেহাবয়ব। আর দৌড়ের যে দৃশ্য দুটি মিডিয়াতেই দেখানো হয়েছে, সেখানে তার হাতে কোন পানির বোতল নেই, বরং রয়েছে অফিসের একটি ফাইল। ওনার পানির দরকার হয় না। পানির দরকার না হলেও পানির নিঃসরণ কিন্তু ঠেকানোর কোন বৈজ্ঞানিক উপায় নেই। ঘাম তার হবেই। ৪২ কিংবা ৪৫ কিলোমিটার দৌড়ানোর পর যে পরিমাণ ঘাম তার বের হবে, তাতে গায়ের জামা কাপড় তো বটেই হাতের ফাইলটিও তার ভিজে যাওয়ার কথা। আচ্ছা ভালো কথা, চাকরি সে করে এমএলএসএস-এর।


এই চাকরিতে বাসা থেকে ফাইল নিয়ে অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনটা কোথায়? দু-একবার হয়ত নিতে হতে পারে, কিন্তু দুই রিপোর্টের ছবিতেই দেখা যাচ্ছে হাতে তার ফাইল।


প্রথম আলোর ছবিটি আরও দুর্দান্ত। সেখানে দেখা যাচ্ছে আবদুর রাজ্জাক ফাইল হাতে দৌড়াচ্ছেন, অথচ পায়ে তার কোন রানিং সু পর্যন্ত নেই। দৌড়াচ্ছেন তিনি স্যান্ডেল পরে! স্যান্ডেল পায়ে ম্যারাথন, প্রথম আলোর সাংবাদিক ছাড়া এই দুনিয়ার আর কেউ ভাবতে পারেন কি না সন্দেহ।


রিপোর্ট দুটি পড়ার পর প্রথম আলো এবং বাংলা ট্রিবিউন দুই জায়গাতেই যোগাযোগ করেছি। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমি যখন আবদুর রাজ্জাক সংক্রান্ত রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে আমার দ্বিধার কথা তাদের জানালাম, সব শুনে তারাও আমার সঙ্গে একমত হলেন। জানালেন, বিষয়টা তারা দেখবেন। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন।


ঠিক এই জায়গাটাতেই এসে যায় নৈতিকতার প্রশ্নটি। রিপোর্ট তো প্রকাশ হয়েই গেছে। মানুষকে যতটুকু যা বিভ্রান্ত করার, করা হয়ে গেছে। এখন ওই রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলে আর লাভটা কি হবে? তাকে না হয় দুটো ধমক দেওয়া যাবে। কিন্তু নওগাঁ থেকে পাঠানো এমন একটি অবাস্তব একটা রিপোর্ট তারা প্রকাশ করল কিভাবে? সম্পাদনা বলে কি কিছু হয় না তাদের?


নৈতিকতার প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা এসে যায়। গালগল্প আর সাংবাদিকতার মধ্যে কোনো দূরত্ব কি থাকতে নেই? মানুষ পকেটে টাকা খরচ করে প্রথম আলো যখন কিনে, পত্রিকা মনে করেই তো কিনে? নাকি ঠাকুরমার ঝুলির গল্প পড়ার আশা নিয়ে কিনে? অনেকে বলেন, লেখালেখির সময় নাকি কিছুটা বাড়তি থাকতেই পারে। ভাষার কারণে একটু আকটু কম বেশি হয়ে যায়। কিন্তু তারও তো একটা সীমা থাকা দরকার। এই যে আবদুর রাজ্জাককে দিয়ে দিনে দুবার করে ম্যারাথন দৌড় দেওয়ানো, এর সত্যতা যাচাইয়ে যদি কেউ নওগাঁতে গিয়ে হাজির হয়?


আচ্ছা ধরা যাক, প্রথম আলোর রিপোর্ট পড়ে বিদেশি কোনো সাংবাদিক এসে হাজির হয়, তারা এ বিষয় নিয়ে একটি রিপোর্ট করতে চায়। সরেজমিনে গিয়ে কি দেখবে তারা? তখন দেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত সংবাদপত্রটির ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?


এ কথা মানতে কোনো দ্বিধা নেই, লেখালেখিটা সবার ঠিক আসে না। সবাই লিখতে পারে না। আবার যারা লিখতে পারে, তারাও আবার সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যমে লেখার সুযোগ পায় না। যারা এই সুযোগটা পায়, তারা সমাজের দায়িত্বশীল একটা অংশ। কিন্তু এই দায়িত্বশীল মানুষজনের কাছ থেকে কি আমরা প্রায়ই দায়িত্বহীন আচরণ লাভ করছি না? তাদের একটা লেখা একটা ভুল বাক্যও যে কিভাবে একজন মানুষকে, একটি পরিবারকে মানসিক কিংবা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেটি কি তারা কখনো ভেবে দেখেছেন?


আমি নিজেও একজন সাংবাদিক। দীর্ঘদিন, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় রয়েছি। দেখেছি, দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা কিভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।


এই যে আবদুর রাজ্জাককে মোটামুটি অমানবিক পর্যায়ের একজন দৌড়বিদে পরিণত করার প্রচেষ্টা, এটা কি খোদ রাজ্জাককেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে না। যে দুই সাংবাদিক এই কাজটি করেছেন, তারা যে রাজ্জাক সাহেবকে প্রচণ্ড ভালোবেসেই এটা করেছেন, তা কিন্তু নয়। করেছেন তারা মিথ্যা এক ইদুর দৌড়ে নিজেকে শামিল করার জন্য। আর এটা করতে গিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানকে, নিজের পেশাকেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন এক প্রশ্নের মুখে। এই প্রবণতা কিন্তু নতুন কিছু নয়, ‘সেনসেশনাল জার্নালিজম’-এর এই অনুশীলন চলছে এই দেশে বেশ দাপটের সঙ্গেই।