বোরহান উদ্দীন, ঢাকাটাইমস
ঢাকা: জনস্বার্থে করা মামলায় রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা শাহবাগের বারডেম ও বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনের সড়কে যানবাহনের অবস্থান ও ফুটপাত দখল বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরপর কিছুদিন মুক্ত ছিল ওই দুই জায়গা। কিন্তু ভিন্ন আঙ্গিকে এখন আবার তা প্রায় আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।
আদালতের নির্দেশের আগে বারডেম ও বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনের সড়ক ও ফুটপাতে স্থায়ী দোকানের আধিক্য ছিল। এখন সেগুলো ভ্রাম্যমাণ দোকানের রূপ নিয়েছে। ফলে পুরো এলাকায় এখন হকারদের দখলে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বারডেম হাসপাতালের সামনে দক্ষিণ থেকে উত্তরে বেতার ভবনের গেট পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ১৫-২০ জন হকার কেনাবেচা করছেন। কেউ আবার ফুটপাতে না বসে সড়কের ওপর ভ্যানে পসরা সাজিয়েছেন।
দিনের বেলায় এদের উপস্থিতি কম চোখে পড়লেও সময় যত গড়াতে থাকে বারডেমের সামনের ফুটপাতে তত বাড়তে থাকে এদের উপস্থিতি।
নানান ধরনের ফল, ডিম, চা, সিগারেট সবই পাওয়া যায় শাহবাগের এই ফুটপাতে। তবে এসব বন্ধে হাসপাতালের সামনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ে না।
গত বছরের ১০ আগস্ট শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল ও শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সামনে যেকোনো ধরনের যানবাহনের অবস্থান,সরকারি-বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অবস্থান ও ফুটপাত দখল বন্ধের নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মরত সাইফুল ইসলাম নিয়মিত ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশের পরও যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে কোথায় যাব।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলেই ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বারডেম ও বিএসএমএমইউর কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসারের কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন হাসপাতালের সামনের এই ফুটপাতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদেরও এতে মদদ আছে বলে তারা জানান।
বারডেমের জরুরি বিভাগের সামনে কোনো অ্যাম্বুলেন্স না রাখার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে বেতার ভবন পর্যন্ত দিনে কম থাকলেও সন্ধ্যার পর তিন-চারটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও ট্রাফিক উভয় বিভাগ) রমনা ও শাহবাগ থানার ওসির প্রতি নির্দেশ ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা খুব একটা দেখা যায় না।
অন্যদিকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত পূবালী ব্যাংকের আশাপাশের ফুটপাত পুরোটাই ফল ব্যবসায়ীদের দখলে। হাসপাতালের সামনের ওভারব্রিজের নিচের অংশও মাঝে মাঝে দখল হয়ে যায়।
আর হাসপাতালের সামনের তিনটি ফার্মেসির মালামাল ভেতরে থাকলেও সন্ধ্যার পর খালি জায়গা ঝালমুড়ি আর ডিমওয়ালের দখলে চলে যায়।
তবে এখানে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আনসারদের তৎপরতা দেখা যায়।
গত বছরের ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার এসব এলাকায় যেকোনো ধরনের যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অবস্থান ও ফুটপাত দখল বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে জনস্বার্থে একটি মামলা করেন। পরে আদালত এসব বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহিদুল হক মল্লিক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে আমরা প্রতিনিয়তই কথা বলি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। তার পরও সংশ্লিষ্টদের বলব যাতে ফুটপাতে কেউ বসতে না পারে সেদিকে নজর দিতে।”
তবে বর্ণিত দুই এলাকার পরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলে দাবি করেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগে ওই এলাকায় স্থায়ী দোকান থাকলেও এখন হয়তো ভ্রাম্যমাণ হকার বসে। বিষয়টি আমরা দেখব।”
(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/বিইউ)