ঢাকা: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল জোটগতভাবে পৌরসভা নির্বাচন করবে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটি তো বাস্তবায়ন হয়্ইনি, উপরন্তু সমঝোতার মাধ্যমে মেয়র পদে একক প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্তও ব্যর্থ হয়েছে। সমঝোতা না হওয়ায় ২৮টি পৌরসভায় বিএনপির পাশাপাশি রয়ে গেছেন জামায়াতের প্রার্থী। এখন এই সমঝোতা না হওয়ার পেছনে জামায়াতের ওপর সরকারের চাপের অভিযোগও করছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা।
কথা ছিল, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আছেন এমন পৌরসভায় জোটের নেতারা স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করে একক প্রার্থী ঠিক করবেন। তারা ব্যর্থ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন নিজে সমাধান দেবেন। কিন্তু স্থানীয় কিংবা অন্য কোনোভাবে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন একক প্রার্থীর আশা মিইয়ে যাচ্ছে ক্রমে।
ভোট গ্রহণের আর বাকি মাত্র দিন দশেক। সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই কোথাও। বিষয়টি বিএনপির জন্য চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছেন দলীয় সূত্র।
তবে এই মুহূর্তে বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে চান পৌরসভা নির্বাচনে। যে কয়টি পৌরসভায় জামায়াতের প্রার্থী আছে, তার মধ্যে ১০ থেকে ১২টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীর ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন তারা। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা হবে না।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। ফলে রাজনীতিতে হামলা-মামলায় কোণঠাসা বিএনপি এই নির্বাচনকে নিয়েছে দলকে উজ্জীবিত করার সুযোগ হিসেবে।
প্রায় আট বছর পর দলীয় প্রতীকের কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হচ্ছে বলে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে প্রথমে জোটগতভাবে নির্বাচনের কথা ভেবেছিল বিএনপি। গত ২৭ নভেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তও হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করে একক প্রার্থী ঠিক করার কথা বলেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হওয়ায় দেশের সব কটি বিভাগেই কম-বেশি প্রার্থী রয়ে গেছে জামায়াতের। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি প্রার্থী সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগের ১৩টি পৌরসভায় রয়েছে দুই দলের প্রার্থী। এগুলো হলো-রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, মুন্ডুমালা, কাটাখালী, নওহাটা ও কেশরহাট; নাটোরের নলডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল ও রহনপুর; বগুড়ার কাহালু; জয়পুরহাট সদর এবং সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুরে নীলফামারীর জলঢাকা, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও বিরামপুর এবং গাইবান্ধা সদর; সিলেটের কানাইঘাট ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা; চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালীর বসুরহাট ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড;খুলনা বিভাগে যশোরের চৌগাছা, খুলনার পাইকগাছা, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দর্শনা এবং ঢাকা বিভাগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভায় বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে জোটের এমন একাধিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,বিএনপিই শরিক দলগুলোর কাছ থেকে তাদের প্রার্থীর তালিকা চেয়েছিল। শুরুতে না দিলেও শেষ পর্যন্ত জামায়াত তালিকা দেয় বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে। কিন্তু বিএনপির তরফে নির্দিষ্ট কোনো সমাধান না আসায় জামায়াত তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে রেখে দিয়েছে।
তবে বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা দাবি করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো তালিকা দেয়া হয়নি তাদের কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিজেরা তালিকা জোগাড় করে জানতে পারি ৪৭টি পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। পরে কিছু জায়গায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও শেষ পর্যন্ত ২৮টির মতো পৌরসভায় তাদের প্রার্থী রয়ে গেছে। তাদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে এখনো।”
তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হবে না বলে জোটের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে শনিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জোটের শরিক দলগুলোর মহাসচিবদের বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি। এ নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শনিবারের বৈঠকে অংশ না নেয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল জামায়াত। কারণ জোটের বৈঠকে অংশ নেয়ার আগে-পরে নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনা এর আগে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে কাউকে বৈঠকে পাঠায়নি দলটি।
পৌরসভা নির্বাচনে একক প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, সমন্বয় না হওয়ার পেছনে জামায়াতের ওপর সরকারি চাপের কথা জানতে পেরেছেন তারা।
ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওই নেতা বলেন, “আমাদের কাছ থেকে বারবার চেষ্টা করলেও সমঝোতার জন্য জামায়াত সাড়া দেয়নি। আমরা এখনো চেষ্টা করছি। তবে জোটে ভাঙন বা হতাশা তৈরির জন্য সরকারের চাপে জামায়াত এমনটা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু জোট আলাদা করার দায়িত্ব কে নেবে। জামায়াত হয়তো এর দায় বিএনপির ঘাড়ে দিতে চায়।”
(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/বিইউ/মোআ)