সাতক্ষীরা: আব্দুল খালেক। পেশায় কৃষক। শ্যামনগর উপজেলার কাশীমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে তার বাড়ি। গত ৪০ বছর ধরে চার বিঘা খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে চাষাবাদ করছিলেন। সরকারি ওই জমি দখল নিতে দীর্ঘ দিন ধরেই পাঁয়তারা করছিলেন পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের দুই সমর্থক।
গত বুধবার তারা খালেকের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে আসে। এসময় খালেক ভয়ে দৌঁড় দিলে পুলিশ তার স্ত্রীকে রাইফেলের বাট দিয়ে এলোপাথারি পেটাতে থাকে। এতে তার পায়ের হার ভেঙ্গে যায়।
পরে আহত গৃহবধূকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন খাতায় পুলিশ কেস না লিখে একসিডেন্টাল কেস উল্লেখ করেন।
খালেকের স্ত্রী আছিয়া বেগম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেয়া ওই জমি দখলের জন্য বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করছিলো গোবিন্দপুর গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে আরিফুল ও আরিজুল ইসলাম।
গত ৭ ডিসেম্বর আরিফুলের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান বাড়িতে এসে হুমকি ধমকি দেয়। পরদিন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরিফুল ইসলামসহ ছয়জনকে বিবাদী করে একটি পিটিশন করেন। মামলা নম্বর-১৫৫৪/১৫। বিচারক আগামি বছরের ১২ জানুয়ারি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কাশীমাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার ও একইসঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
বুধবার দুপুরে শ্যামনগর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইমরান হোসেন ও একজন সিপাহী এসে প্রতিপক্ষদের নোটিস দেন।
আছিয়া অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন (বুধবার) রাতেই এসআই আমিনুর রহমান ও এসআই ইমরান হোসেনসহ চারজন পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে। আরিফুল ও আরিজুল ইসলামও তাদের সঙ্গে ছিলো। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমার স্বামী ভয়ে দৌঁড় দেয়। এসময় এসআই আমিনুর তার রাইফেলের বাট দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করে। এবং এলোপাথারি লাথি মারতে থাকে। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে আমার স্বামী আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে আছিয়াকে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানোর সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এসএম আনিছুর রহমান খাতায় পুলিশ কেস না লিখে একসিডেন্টাল কেস লেখেন বলে অভিযোগ করেছেন খালেক। তিনি জানান, দুই দিন চিকিৎসার পর শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন ওই ডাক্তার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এসএম আনিছুর রহমান জানান, আছিয়ার ডান পায়ের ফিমার (হাড়) যেভাবে ভেঙে খ- হয়ে গেছে। কোনো ভারী জিনিস দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছিলো।
রেজিস্ট্রেশন খাতায় পুলিশ কেস না লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, আছিয়ার তখন জ্ঞান ছিলো না।
তবে হুমকি ও রাতে খালেকের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে হামলা করার বিষয়ে আরিফুল ও আরিজুলের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে আরিফুল ও আরিজুলের ভগ্নিপতি ও হুমকি প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, তার ও তার শ্যালকদের বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগ রটনা করা হচ্ছে।
তবে ওই দিন রাতে পুলিশ নিয়ে আব্দুল খালেকের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুর। তবে কী কারণে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
সহকারী উপ-পরিদর্শক ইমরান হোসেন জানান, তিনি ঘটনার দিন দুপুরে আব্দুল খালেকের বাড়িতে নোটিস করতে গেলেও রাতে যাননি। কারণ তাকে ওই দিনই গাবুরা বিটে বদলি করা হয়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টফোর ডটকমকে জানান, এ ব্যাপারে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খালেকের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএ)