logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
বৈষম্য নিরসনে বিসিএস ও ভার্সিটি শিক্ষকদের পদোন্নতি?
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:২৩:১৮
image

ঢাকা: নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা বৈষম্য দূর করতে পদোন্নতির বিধান চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে।


মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


রবিবার এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না হলেও পদোন্নতি বা অন্য কোনোভাবে সুবিধা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এটি নিয়ে বেতনবৈষম্য-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কাজ করবে।”


এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকদের আমরা মর্যাদার আসনেই রাখতে চাই। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। শিক্ষকদের সুবিধা কীভাবে দেয়া যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”


সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়ে এর আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগী ভূমিকা নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত কমিটিকে একাধিকবার শিক্ষকদের বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু কমিটি বিষয়টি আমলে নেয়নি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিষয়ে এই জটিলতা সৃষ্টির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের একগুঁয়ে সিদ্ধান্তই দায়ী। শিক্ষামন্ত্রীর মতামত পাশ কাটিয়ে বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকদের বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে।”


নতুন নিয়মে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২-তে যেতে সরকারের করা কমিটির অনুমোদন লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তা কার্যকর করতে পারবে।


অন্যদিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের (সরকারি কলেজশিক্ষক) অধ্যাপকদের গ্রেড ৩–এ যাওয়ার জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।


জানতে চাইলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেভাবে বলা হচ্ছে তাতে অধ্যাপকদের গ্রেড ১–এ যাওয়ার সুযোগ অর্ধেক কমে যাবে। কারণ, বর্তমানে মোট অধ্যাপকদের ২৫ শতাংশ গ্রেড ১–এ যেতে পারেন। সেখানে এখন প্রথমে গ্রেড-২ ভুক্ত করে তাদের থেকে ২৫ শতাংশ অধ্যাপককে গ্রেড-১-এর কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষক সমাজের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”


এক প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ কামাল বলেন, সরকার যেভাবেই হোক শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখলে শিক্ষকরা তা মেনে নেবেন। 


বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা তৃতীয় গ্রেডভুক্ত। পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তারা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-১-এর বেতন পান। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫-এর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলুপ্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট শর্ত মেনে গ্রেড-৩ ভুক্ত অধ্যাপকরা গ্রেড-২ ও পরে গ্রেড-১-এর বেতন পাবেন। গ্রেড-১ ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা গ্রেড-২ ভুক্ত যত অধ্যাপক আছেন, তার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর যেহেতু গ্রেড-২ ও গ্রেড-১-এ বেতনের বিষয়ের সঙ্গে সরকারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্থিক সংশ্লেষ জড়িত, সে জন্য এই দুই গ্রেডে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটির পূর্বানুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তা কার্যকর করতে পারবে।


বর্তমানে বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপকরা চতুর্থ গ্রেডভুক্ত। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-৩ ভুক্ত হন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামেন।


এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কলেজের অধ্যাপকদেরও গ্রেড-৪ থেকে গ্রেড-৩ পদে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে।


(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/এমএম/মোআ)