মাঝ নদীতে লঞ্চে তরুণীকে ধর্ষণ, আটক ৪
চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
১৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:২২:০৩

চাঁদপুর: চাঁদপুরের নৌ-সীমানায় ঢাকা-মাদারীপুরগামী এমভি পারাবাত-১৪ নামে যাত্রীবাহী একটি লঞ্চের কেবিনে এক গৃহবধূকে (১৯) গণধর্ষণের অভিযোগে চার যুবককে একটি বিদেশি রিভলবারসহ আটক করেছে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ। গতকাল রবিবার রাত ১১টায় মেঘনা নদীর মহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটক যুবকরা হচ্ছেন মাদারীপুর জেলার সমিতির হাট এলাকার আতাহার মোল্লার ছেলে সুজন (২৫), ঢাকা শ্যামপুর পোস্তাখোলা ৭৭নং করিম উল্যাহবাগ এলাকার আতিক উল্যাহর ছেলে ইমরান (২৫), একই এলাকার হারুনুর রশিদের ছেলে সাব্বির হোসেন (২০) ও মো. মফিজুর রহমানের ছেলে রজব আলী (২৬)। এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে চাঁদপুর মডেল থানায় ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
ওই গৃহবধূ জানান, তার প্রেমিকসহ তিনি রাত ৮টায় ঢাকা নৌ-টার্মিনাল থেকে মাদারীপুরগামী এমভি পারাবাত-১৪ লঞ্চে উঠেন। লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় পৌঁছলে তাদের পাশের কেবিনে থাকা ওই চার যুবক নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের দরজা খুলতে বাধ্য করে। এ সময় ওই গৃহবধূকে রুমে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে সাথে থাকা প্রেমিক সোহেল তানভিরকে (২৫) লঞ্চের ছাদে নিয়ে মারধর করে। পরে তারা প্রেমিক সোহেল তানভিরকে ওই যুবকদের কেবিনে নিয়ে আটকে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর তারা ওই গৃহবধূর কেবিনে প্রবেশ করে। এ সময় সুজন নামে এক যুবক গৃহবধূকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে সুজনের সহযোগীরা গৃহবধূকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তিনি চিৎকার করলে লঞ্চে থাকা অন্যান্য যাত্রীরা ঘটনাস্থলে এসে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে চার যুবককে ধরে গণপিটুনি দেয়। এসময় লঞ্চের স্টাফরা ও লঞ্চের মাস্টার মতিউর রহমান যুবকদের গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষা করে ৩৩২নং কেবিনে তাদের তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে লঞ্চটি চাঁদপুর লঞ্চঘাটে অবস্থান নেয়। চাঁদপুর নৌ-পুলিশকে লঞ্চের যাত্রী ও লঞ্চের মাস্টার মতিউর রহমান বিষয়টি অবগত করে যুবকদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় পুলিশ তাদের ৩৩২ নং কেবিনে তল্লাশি চালিয়ে বালিশের নিচে থাকা ২ রাউন্ড গুলি, মদ, গাঁজাসহ একটি বিদেশি রিভলবার উদ্ধার করে। একই সঙ্গে প্রেমিক যুগলকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যায়।
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন. মডেল থানার এসআই মাসুদ শামীম, অনুব চক্রবর্তী, এএসআই পলাশ বরুয়া ও ডিবির ফিরোজ আলম ও আহসান উজ্জামান লাবু।
সোমবার দুপুরে ওই গৃহবধূর বাবা খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় আসেন। তিনি জানান, দুই বছর আগে ওমর ফারুক নামে একজনের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু ওই স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাকে না জানিয়ে তার মেয়ে সোহেলের সাথে পালিয়ে মাদারীপুর যাচ্ছিল বলে তিনি জানতে পারেন।
প্রেমিক সোহেল তানভির জানান, তারা দুইজনে বিয়ে করবেন বলে দেশের বাড়ি মাদারীপুর যাচ্ছিলেন।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত রাতে লঞ্চে মারামারির ঘটনা শুনে নৌ টার্মিনালে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি মেয়েটির পার্শ্ববর্তীর কেবিনের যুবকরা তাকে নির্যাতন করেছেন। ওই সময় চারযুবককে আটক করা হয়। গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ধর্ষণের দায়ে চার যুবককে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ ধর্ষণ ও নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ভিকটিম ও তার সাথে ঢাকা থেকে আসা সোহেলের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তারা মাদারীপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চার যুবক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে পার্শরিক নির্যাতন করে। পুলিশ রাতেই পারাবত-১৪ লঞ্চতেকে জারজনকে আটক করেছে। আটককৃতদের কেবিন থেকে একটি রিভলবার ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে ধর্ষণ ও অস্ত্রের মামলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)