পুষ্টির চাহিদা মেটাবে শুয়োপোকা!
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৭ মার্চ, ২০১৬ ১০:৪৫:১৪

ঢাকা: সেন্ট্রাল আফ্রিকায় প্রোটিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিত শুয়োপোকা। ক্যামেরুনের বিজ্ঞানীরা পরিবেশ রক্ষায় ভিন্নভাবে শুয়োপোকা উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বাজারে ছোট ছোট শুয়োপোকা বিক্রি হচ্ছে। আর এগুলোর দিকেই নজর বেশিরভাগ ক্রেতার। অনেকে এটা রান্না করে, অনেকে ভেজে খায়। এসব শুয়োপোকাদের প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে ধরা হয়। এসব পোকা মাছের পরিপূরক খাবার হিসেবেও কাজ করে।
ক্যামেরুনের মতো দেশে যেখানে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভোগে সেখানে শুয়োপোকা প্রোটিনের চাহিদা পূরণের অন্যতম উৎস হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটিতে দিনে দিনে এটির চাহিদাও বাড়ছে। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।
বাজারে এক ঝুড়ি শুয়োপোকা প্রায় চার ডলারে বিক্রি হচ্ছে যেটি অন্য সব মাংসের চেয়ে দামি। এসব শুয়োপোকা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। ঘন বনজঙ্গলের ভেতর পাম গাছের ডালে থাকে এসব শুয়োপোকা। শুয়োপোকার উৎপাদন বাড়াতে নতুন একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
‘লিভিং ফরেস্ট ট্রাস্ট’এর সহ প্রতিষ্ঠাতা জন মোয়াফোর বলেন, এটা খুব সফল একটা ঘটনা। প্রথমত কেউ জানত না যে, শুয়োপোকা বৈজ্ঞানিকভাবে উৎপাদন করা যায়। আমরা যখন এই ধারণা জানালাম স্থানীয়রা আমাদের বিশ্বাস করছিল না। বুঝাতে হয়েছে যে, প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতেই এই উদ্যোগ। আমার মনে হয় বৈজ্ঞানিকভাবে এই শুয়োপোকা উৎপাদনের ফলে এখানকার মানুষের অনেক লাভ হবে, তাদের জীবনমান আরও উন্নত হবে।
নতুন উপায়ে এই পোকা উৎপাদনে দরকার একটি প্লাস্টিক বক্স। প্লাস্টিক বক্সের ভেতরে রাখা পাম গাছের ডালের মধ্যে যে শুয়োপোকা জন্মায় তা বনজঙ্গলের তুলনায় আট থেকে দশ গুণ বেশি।
শুয়োপোকা চাষী মিশায়েল সোনগুই বলেন, এই প্রক্রিয়ায় সময় বেঁচেছে। আমি এখন মাসে মাত্র চারবার জঙ্গলে যাই। কিন্তু আগে হয়তো প্রতিদিনই আমাকে জঙ্গলে যেতে হতো। বক্সের মধ্যে পাম গাছের ডালগুলো প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেয়ার পর সেখানে আমার অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। আমার অনেক সময় বেচে যাচ্ছে। এভাবে পাম গাছ থেকে শুয়োপোকা উৎপাদন করে আমি খুবই গর্বিত।
ক্যামেরুনে প্রতি তিনজন শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। কারণ পুষ্টিকর খাবার তারা গ্রহণ করতে পারেনা, ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবেও এসব শিশুরা বেড়ে উঠতে পারেনা।
ক্যামেরুনের একটি গ্রামের একজন পরিসেবক মেবেদে দিউদোনে বলেন, ‘আমাদের দেশের শিশুরা যদি পাম গাছ থেকে উৎপাদিত এসব শুয়োপোকা নিয়মিত খায় তাহলে আর অপুষ্টি থাকবে না। কারণ প্রোটিনসমৃদ্ধ প্রাণীদের মধ্যে শুয়োপোকা অন্যতম। প্রোটিনের চাহিদা মিটলে অপুষ্টির সমস্যা হারিয়ে যাবে।’
ক্যামেরুনের তিনটি গ্রামে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে এ প্রকল্প চালু হয়েছে। আর এটা যদি পুরোপুরি সফল হয় তাহলে হর্ন অব আফ্রিকার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুখের বার্তা নিয়ে আসবে।
(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/জেএস)