ঢাকা: ঢাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবেই (ডিপিপি) থেমে আছে। এখনো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি।
ঢাকার মানুষকে যানজট নামের ‘যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি দিতে গত বছরের মাঝামাঝি এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ২২টি ইউলুপ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানানো হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন পর্যায়ের কাজ শুরু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সময়ে জমি মেপে একটি পরিকল্পনা কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। এ জন্য দুটি ডিপিপি তৈরি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে সাতরাস্তা থেকে বনানী পর্যন্ত ১০টি আর বনানী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২টি ইউলুপ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কত টাকা ডিপিপিতে ধরা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
চলতি বছরের শুরুতে এই ডিপিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে স্থানীয় সরকারসচিব আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ডিপিপি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এখন সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে ওঠার কথা। সেখানে এটি চূড়ান্ত হলে ঢাকা উত্তর সিটি কাজ শুরু করবে। কিন্তু এটি কবে নাগাদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যাবে সেটি বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কেউ। ফলে ইউলুপ নির্মাণ কবে শুরু হবে সেটিও অন্ধকারে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ার ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা ইউলুপ নির্মাণের লক্ষ্যে দুটি ডিপিপি তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে একটি বৈঠক হয়েছে। এরপরের অগ্রগতি আমার জানা নেই।”
তাহলে ইউলুপ নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নিয়মানুযায়ী ডিপিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে মূল্যায়নের পর আমরা এটার কাজ শুরু করতে পারব। এই প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেছিলেন, ইউলুপ চালু হলে সামনের জুনের মধ্যে উত্তর সিটির প্রায় ৪০ ভাগ যানজট কমে যাবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতাই শেষ হয়নি। ফলে আগামী জুনে যানজট নিরসন হওয়া দূরে থাক, আগামী এক বছরেও এর কাজ শুরু হবে কি না সেটি নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নতুন এই পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রকৌশলী কামরুল হাসান।
কামরুল বলেন, “আমার উদ্ভাবিত পদ্ধতি পুরো ঢাকায় বাস্তবায়নে সময় লাগে সর্বোচ্চ ছয় মাস। আর অর্থ লাগে খুব কম, যেটার জন্য সিটি করপোরেশনকে অন্যত্র যাওয়ার দরকার নেই। এই অর্থ ডিসিসিই বহন করতে পারে।”
এ বিষয়ে জানতে মেয়র আনিসুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগও করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইউলুপ বাস্তবায়নের জন্য উত্তর সিটি যে টিম গঠন করেছে তাতে রাখা হয়নি এই পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রকোশলী কামরুল হাসানকে। এমনকি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে মডেল তৈরি করা হয়, সেখানেও তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এই মডেল তৈরিতে কনসালটেন্ট হিসেবে নেয়া হয় স্থপতি তানভীর নেওয়াজ ও প্রকৌশলী সালেহ উদ্দিন আহমেদকে।
কামরুল হাসানকে কেন রাখা হলো না- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ার বলেন, “তার ধারণাই আমরা বাস্তবায়ন করছি। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী কামরুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়নি। আমার কাছে কোনো পরামর্শও চাওয়া হয়নি।”
কোনো অভিযোগ-অনুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে কামরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমার নামে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে- প্রকৌশলী কামরুল হাসানের উদ্ভাবিত পদ্ধতি বাস্তবায়ন করুন। অথচ সেই আমিই প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নেই। এ নিয়ে আর কী-ই বলব।”
মডেল অনুসারে জয়দেবপুর চৌরাস্তা-সংলগ্ন তেলিপাড়া থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত দুই ধরনের ইউলুপ তৈরি করা হবে।
বড় ও মাঝারি গাড়ির জন্য ‘টাইপ-এ’ এবং ছোট গাড়ির জন্য ‘টাইপ-বি’ ইউলুপ ডিজাইন করা হয়েছে। ‘টাইপ-এ’র ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৪৪ ফুট প্রশস্ত এবং ‘টাইপ বি’র ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০৪ ফুট প্রশস্ততায় ইউলুপ তৈরি করা হবে। একটি ইউলুপ থেকে অপর ইউলুপের দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, ২২টি ইউলুপ করতে প্রায় ৩৮ বিঘা জমির দরকার। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমি রয়েছে। উত্তর সিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ জমিগুলো খালিই পড়ে আছে। তাই এসব জমি নতুন করে অধিগ্রহণের দরকার হবে না।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, ঢাকা উত্তর যদি সফল হয় তবে তারাও ইউলুপ প্রকল্প গ্রহণ করবে। তার আগে এ প্রকল্পের ঝুঁকি নেয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই।
ইউলুপ পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, এই বিশেষ কৌশল বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলতে এক মুহূর্তও থামতে হবে না। সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন হবে না। লাগবে না সিগন্যাল বাতিও।
কামরুল বলেন, এ পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা ইন্টারসেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ ধরনের ইউটার্ন স্থাপন করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কে আর সিগন্যাল পড়বে না।
(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/মোআ)