ঢাকা: খুনি সম্ভবত মা মাহফুজা মালেক জেসমিনই। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তাকে ভীষণভাবে পেয়ে বসেছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ওনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলছেন না। জিজ্ঞাসাবাদ যতটুকু করেছি তাতে মনে হচ্ছে তিনিই তার দুই সন্তানের ঘাতক। সন্তানদের নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্নতাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে ওঠলো। তবে জেসমিনের মানসিক অবস্থা নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে সেটারও কোনো ভিত্তি নেই। জেসমিন সুস্থ আছেন। তার চাল-চলন কথা-বার্তা সব কিছুই স্বাভাবিক-এই বক্তব্য তদন্তে নিয়োজিত একজন ডিবি কর্মকর্তার।
বৃহস্পতিবার জেসমিনকে নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে নেয়ার পর গত ২৪ ঘণ্টায় ডিবি কার্যালয়ে জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি। মামলাটি এখন ডিবিই তদন্ত করছে। মামলাটি রাজধানীর রামপুরা থানা পুলিশ তদন্ত করছিল। থানা পুলিশও তাকে পাঁচ দিনের রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানেও জিজ্ঞাসাবাদে নতুন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। র্যাবের কাছে প্রথম দিনই দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে। জেসমিনের এই স্বীকারোক্তি নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন যে- কেবল লেখা পড়া নিয়ে উদ্বেগের কারণে একজন একজন মা দুই সন্তানকে হত্যা করতে পারে? প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হচ্ছিল যে- র্যাব বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কাকে আড়াল করতে চাইছে? এসব নানা প্রশ্ন মাথায় আসার পর মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবির বক্তব্যও সেই একই রকম।
ডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রিমান্ডে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি মাহফুজা মালেক জেসমিনকে। আমরা অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া চেষ্টা করেছি। তবে তাদের কাছে জেসমিনকে পুরোপুরি সুস্থই মনে হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন ডিবিকে জানিয়েছে সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি সব সময় খুব উদ্বিগ্ন থাকতেন। চাপ নিতে না পেরে সে তাদের সন্তানদের হত্যার করে বসে। এই হত্যার পেছনে অন্য কারো প্ররোচণা নেই বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমি ক্রোধের বশে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছি। এ সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, গতকাল আমি কিছু সময় জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ইনশাআল্লাহ শনিবারের মধ্যে হয়তো একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব। মাহফুজা মানসিকভাবে সুস্থ কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। তবে এ ব্যাপারে সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।
এক ডিবি কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, মাহফুজা মানসিকভাবে সুস্থ রয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ছেলে-মেয়েদেরকে জজ ব্যারিস্টার বানাতে চেয়েছিলেন এবং এটাই ছিল তার একমাত্র সমস্যা। কোনো পরকীয়া জড়ানোর বিষয়টিও মাহফুজা নাকচ করে দেন। স্বামীর পরকীয়া নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটিও নাকচ করে দিয়েছেন মাহফুজা।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রীতে নুসরাত জাহান অরণী ও আলভী আমান নামে দুই ভাই-বোনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন জড়িত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/এএ/এআর)