ঢাকা:বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তবে এখনো দুটি বিষয়ে দুশ্চিন্তা দলটির পিছু ছাড়ছে না। প্রধান দুশ্চিন্তাটি হলো সম্মেলনস্থলের জায়গাস্বল্পতা, যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের নেতারা।
ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের অতিথিদের নিমন্ত্রণের কাজটিও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে কাউন্সিলের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
দুই দিন বাদে ১৯ মার্চ শনিবার বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল বসবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে।
জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য ভেন্যু হিসেবে তিনটি স্থানের জন্য আবেদন করেছিল বিএনপি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশাপাশি অন্য দুটি হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি না পেয়ে দলটি যখন কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের অনুমতি পায় তারা।
কিন্তু রুদ্ধদ্বার পর্বে কাউন্সিলরের সংখ্যার চেয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ধারণক্ষমতা অর্ধেকের কম। এ ছাড়া প্রথম পর্বের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন অতিথি ও নিমন্ত্রিত নেতাকর্মীরা। এই পর্বের প্যান্ডেলের জন্য যে পরিমাণ উন্মুক্ত জায়গা দরকার, ততটুকু নেই ওই প্রতিষ্ঠানে। ফলে বিপুলসংখ্যক উপস্থিতির কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা কাজ করছে কাউন্সিলের নিরাপত্তা উপকমিটির নেতাদের মনে।
তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশ ব্যবহারের সুযোগ চায় দলটি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি মিললেও এখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি মেলেনি।
তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএনপির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অন্যবারের মতো এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। প্রথমে থাকবে ডেলিগেট, অতিথি, কাউন্সিলরদের নিয়ে উন্মুক্ত পর্ব। এখানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেবেন।
শুধু কাউন্সিলরদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয়ার্ধের রুদ্ধদ্বার পর্ব। সেখানে দল ও নেতৃত্বের ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলবেন কাউন্সিলররা । এ ছাড়া অনুমোদন হবে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র এবং নির্ধারণ হবে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে,এবার বিএনপির কাউন্সিলরের সংখ্যা ২৬০০।
রুদ্ধদ্বার পর্বের জন্য আট শতাধিক আসনের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন যথেষ্ট নয় বলে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে মহানগর নাট্যমঞ্চের কথা ভাবছে বিএনপি। কিন্তু দুটো ভেন্যুর দূরত্ব বিবেচনায় এ ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা বিএনপির। কারণ এটি করতে গেলে সম্মেলন ঘিরে তাদের পরিকল্পিত নিরাপত্তাও ভাগ হয়ে যাবে দুটো ভেন্যুতে। তাই অনুমতি পেলেও নাট্যমঞ্চ ব্যবহার করবে কি না তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার ভেন্যু পরিদর্শন শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কাউন্সিলের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএনপির বিপুলসংখ্যক কাউন্সিলরসহ ডেলিগেটদের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ভেন্যুটি খুবই অপ্রতুল। নির্ধারিত ভেন্যুতে একটি সফল কাউন্সিল সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। তাই বিকল্প ভেন্যুর চিন্তা করা হচ্ছে।
তবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। বুধবার বিকেলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন,“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মতো করে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে। এর বাইরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ইনশা আল্লাহ কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না।”
কিন্তু কাউন্সিলের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করছেন এ-সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক আ স ম হান্নান শাহ। মঙ্গলবার ভেন্যু পরিদর্শনের পর দুটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে হান্নান শাহ বলেন, “প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো ছোট পরিসরে কাউন্সিল করতে হবে। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ- যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল শেষ করা।
হান্নান শাহ বলেন,“কাউন্সিলের এলাকাটি যেহেতু ছোট তাই বেশি সাবধান হতে হবে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নেতাকর্মীরা কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি সূত্র জানায়, কাউন্সিলের নিরাপত্তায় ১০০ ক্লোজ সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরা ও চল্লিশটি আর্চওয়ে বসানো হবে। প্রায় এক হাজার শৃঙ্খলাকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে পুরো এলাকা মনিটর করবেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহভাজন যে কাউকে তল্লাশি করবেন।
এদিকে কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার পর্বের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত বলে জানা গেছে। বিকল্প কোনো উপায় বের করা যায় কি না তা নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনেই বসবে বিএনপির কাউন্সিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ ব্যবহারের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি।”
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বিকল্প ভেন্যুর বিষয়ে।
(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/মোআ)