logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
শফিক রেহমানকে ঘিরে মাঠে সক্রিয় হবে বিএনপি!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:৪৭:১৮
image



ঢাকা: দলে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সাংবাদিক শফিক রেহমান বিএনপি ঘেঁষা বলে পরিচিত। বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মনে করা হয় তাকে। তাই তার গ্রেপ্তারের ‍পর থেকেই এ নিয়ে সরব বিএনপি।






তার মুক্তির দাবিতে দলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচির ‍হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।






বিএনপি নেতারা মনে করছেন, পদ-পদবি না থাকলেও দলের পক্ষে শফিক রেহমান রাজনৈতিক গুম-খুনসহ সরকারের নানা কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছে দিতে কাজ করেন। এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পেছনে তার হাত থাকতে পারে, সরকার এমন ধারণা থেকেও তাকে গ্রেপ্তার করে থাকতে পারে।






তবে সরকার শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে যে অভিযোগটি সামনে আনছে, তা বিশ্বাস করেন না বিএনপির শীর্ষ নেতারা।






সরকার বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত শফিক রেহমান।






বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “শফিক রেহমান একজন ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ। তিনি এমন ষড়যন্ত্রে জড়িত, গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”






এদিকে শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের পর বিএনপির ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ বলে পরিচিত কারো কারো মধ্যে অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।






বিএনপি শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ইতিমধ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবহিত করেছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিএনপির একাধিক নেতা কথা বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‍দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।






বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার নিয়ে মাঠে সরব থাকবে বিএনপি। তার মুক্তি না হওয়া পর‌্যন্ত মানববন্ধন, গোলটেবিল আলোচনা, প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী নানা সংগঠনের পক্ষ থেকেও এই ধরনের কর্মসূচি নেয়া হবে। ইতিমধ্যে এমন নির্দেশনাও তাদের দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।






শনিবার ভোরে রাজধানীর ১৫ ইস্কাটন গার্ডেনের বাসা থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার‌্যালয়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।






এরপর পুলিশ শফিক রেহমানকে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে এক সপ্তাহের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।






শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশের পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার‌্যলয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।






এর কিছুক্ষণ পর ঠাকুরগাঁও থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং মুক্তি দাবি করেন।






দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুবাদে সে দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে শফিক রেহমানের। তার গ্রেপ্তারের খবর জানার পরপর বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনকে।






শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বিরোধী মতকে দমনের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তিনি অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন।






এদিকে রবিবার দুপুরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শফিক রেহমানের বাসায় যান। এ সময় তারা তার স্ত্রী তালেয়া রহমানের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।






বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতারা শফিক রেহমানের স্ত্রীর পাশে থাকার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তার মুক্তির দাবিতে প্রতিনিয়ত কর্মসূচি হোক বা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে হলেও এই ইস্যু সামনে রাখার কথা বলেছেন।






বৈঠকে শফিক রেহমানের মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপির এক নেতা বলেন, “এটা অ্যালাইভ রাখতে হবে। কথা বলতে হবে। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় কথা বলতে হবে। বিভিন্নভাবে এ নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে হবে।”






আশির দশকে শফিক রেহমানের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের রোষানলে পড়ে তিনি ব্রিটেনে পাড়ি জমান। এরশাদের পতনের পর তিনি দেশে ফিরে এসে আবার যায়যায়দিন সম্পাদনা করেন।






তার ‘মৌচাকে ঢিল’ সাময়িকীও ব্যাপক আলোচিত পত্রিকা।






২০০৬ সালের জুনে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনকে দৈনিক পত্রিকা হিসেবে সম্পাদনা করেন শফিক রেহমান। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে কিছুদিন পর সেটির স্বত্ব বিক্রি করে দেন।






বর্তমানে এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘লাল গোলাপ’ নামের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে সম্প্রচার মাধ্যমে সক্রিয় তিনি।






(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/মোআ)