logo ০৫ জুলাই ২০২৫
ঘুরছে না মুক্তাগাছার ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
২৭ জুলাই, ২০১৬ ১২:৪৮:৩১
image




মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ): যেখানে নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে, সেটাই ঘুরছে। চার পাশের দর্শকরাই দেখছেন কুশীলবদের। সেই ব্রিটিশ আমলে এমন ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চে নাটক দেখেছেন ময়মনসিংহের এই উপজেলার মানুষ।



প্রযুক্তির বিকাশে যুগে মুক্তাগাছায় নাটকের সেই রমরমা দিন হারিয়ে গেছে।  থেমে গেছে এই নাট্যমঞ্চও।



ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাটকের ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিম-ল এক সময় ছিল অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ। নাটক, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতিতে ছিল মুক্তাগাছার জমিদারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।  আর নাটক আরও জনপ্রিয় করেছে এই ঘূর্ণায়মান মঞ্চ।



জমিদার জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরীর ছেলে কুমার ভূপেন্দ্র কিশোর ছিলেন নাটকপ্রিয়। ভূপেন্দ্র কিশোরের নামানুসারেই ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠ নামে মঞ্চটি তৈরি করা হয়। এটি ছিল কলকাতার বাইরে এশিয়ায় প্রথম এ ধরনের মঞ্চ।



উনবিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকেই যে মুক্তাগাছায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল, এটা তারই প্রমাণ। মঞ্চের দুই পাশে ছিল হারমোনিয়াম ও তবলাবাদকের জন্য আলাদা আলাদা দুইটি স্থান। দক্ষিণ দিকে পারফরমারদের বিশ্রামগৃহ, পেছনে গ্রিনরুম। গ্রিনরুমের পাশেই ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ, যাতে ছিল লোহার তৈরি ছোট ছোট সিন্ধুক। জমিদাররা পারফর্মার নিয়ে আসতেন সুদূর কলকাতা থেকে।



পুরো শীতকাল ধরে এখানে বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হতো।



রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ‘ছেঁড়াতার’ নামক বিখ্যাত নাটকটি মুক্তাগাছার কথ্য ভাষায় রূপান্তরিত করে মঞ্চায়নের পর ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠের শিল্পীরা প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।



ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠের শিল্পীদের অভিনীত আরো কিছু বিখ্যাত নাটকের মধ্যে ‘বিসর্জন, ব্যপিকা বিদায়, রামের সুমতি, মানময়ী গার্লস স্কুল, সীতা, রমা, বিজয়া, কাশীনাথ, কারাগার, মরি কাশিম, চাঁদ সওদাগর’ প্রভৃতি।



জমিদারি বিলুপ্তির পর ১৯৫৮ সালে ফোরটি ব্রাদার্স নামে একটি সংগঠনের সৃষ্টি হয়। এই সংগঠনের মঞ্চায়িত উল্লেখযোগ্য নাটক ছিল পাহাড়ি ফুল, বেদের মেয়ে, টিপু সুলতান, হায়দার আলী, গাঁয়ের বধূ, মহুয়া, নদের চাঁদ, পথের শেষে ইত্যাদি।



দীর্ঘদিন পর ১৯৮২ সালে ১৬টি সংগঠনের অংশগ্রহণে নাট্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ১৯৮৬ সালে ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠের ধ্বংস স্তূপে শেষবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ওরা আছে বলে। এরপর আর কোনো নাটক এই মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়নি।



বর্তমানে সংস্কারের অভাবে বিনষ্ট হচ্ছে এশিয়ার একমাত্র ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠ। সেই থেকে আর ঘুরে না নাটকের মঞ্চটিও। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মুক্তাগাছা রাজবাড়ি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে আনা হয়েছে। সংস্কারের ধারাবাহিকতায় ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ সংস্কারের দাবি দেশি-বিদেশি পর্যটক ও মুক্তাগাছাবাসীর।



(ঢাকাটাইমস/২৭ জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)