আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের অর্থ দিয়ে নতুন জিন আবিষ্কার
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২৭ জুলাই, ২০১৬ ১৮:৫৮:১৬

ঢাকা: মনে আছে সেই আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের কথা? সেই যে দুনিয়া সুদ্ধ মানুষ মাথায় বালতি ভরা বরফ পানি ঢেলে দেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল একজন আরেকজনের দিকে!
হলিউডের বিখ্যাত সব তারকারা নিজেদের গায়ে বরফ ঢালবার ভিডিও বানালো, নিজেদের অর্থ দান করে তারপর কোনো একজন সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে একই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল? মনে আছে তার কথা?
আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ ছিল ইন্টারনেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় 'চ্যারিটেবল ফেনোমেনন' মানে দান করবার ঘটনা। আর এর মূলে ছিল এএলএস নামের একটা দুরারোগ্য স্নায়ুর রোগের গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা আর রোগটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস(এএলএস) এক ধরনের স্নায়ুবিক দুরারোগ্য রোগ। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে সাহায্য তহবিল যোগানোর জন্য ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হয় ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’। বিষয়টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় আর সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাতারাতি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, জর্জ বুশ, ব্রিটনি স্পিয়ার্স, টম ক্রুজ, টেলর সুইফট, লেডি গাগা, জেনিফার লোপেজসহ অনেক তারকা, রাজনীতিবিদ তখন আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তারা একটা বড় অংকের অর্থ দান করেন এএলএস নিয়ে আরো গবষণার জন্য। ফলাফল, প্রচুর পরিমাণ তহবিল সংগৃহীত হয় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।
ভালো খবর হচ্ছে, এত এত মানুষের বরফ জলের স্নান আর হাত খোলা দান, কোনটাই বিফলে যায়নি। সংগৃহীত তহবিলের টাকা গবেষকদের এএলএস রোগের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এমন নতুন একটি জিন শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস(এএলএস), যা সাধারণত লো গেরিগস বা মোটর নিউরণ রোগ হিসেবে পরিচিত। এটি ধীরে ধীরে মানুষের স্নায়ুর ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতে শুরু করে। প্রথমে মস্তিষ্কের স্নায়ু দূর্বল করে দেয়। এরপর মেরুদণ্ড ও শেষে সারা শরীরের স্নায়ুর ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। সরল ভাষায়, মানুষ তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করতে পারে না।এখন পর্যন্ত মানুষ এই রোগের কোনো প্রতিরোধক অথবা যুৎসই চিকিৎসার পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারেনি।
এএলএস অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যে একশ মিলিয়ন ডলারে বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে। তারমধ্যে এক মিলিয়ন ডলার ‘প্রজেক্ট মাইন’ -এ দেয়া হয়েছে। এএলএস আক্রান্ত কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষের ওপর জিনোমের পরিণতি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিচালনা করে ‘প্রজেক্ট মাইন’। সেই গবেষণার ফলেই NEK1 নামে নতুন এক ধরনের জিন আবিষ্কৃত হয়েছে, বলা হচ্ছে এএলএস রোগের জন্য দায়ী সবচেয়ে বেশি যে জিনের নাম তালিকায় উঠে এসছে এটি এখন তার মধ্যে অন্যতম।
সবাই আশা করছেন যুগান্তকারী এই সাফল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এই রোগের থেরাপি উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। সাম্প্রতিক এ সাফল্য নিয়ে এএলএস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বিজ্ঞানী লুসি ব্রুইজিন বলেছেন, ‘NEK1 জিনের আবিষ্কার এএলএস গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে কাজ করবে। আর এর সবটাই সম্ভব হয়েছে আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের পেছনের মানুষগুলোর দান করা টাকা।’
সূত্র: স্কাই নিউজ।
(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এসআই)