logo ০৫ জুলাই ২০২৫
যেখানে এমপি-৫ পাওয়া যায় মাত্র ৬৭ ডলারে
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২৮ জুলাই, ২০১৬ ২০:১২:৫১
image



ঢাকা: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসী শহরটির নাম দাররা আদমখেল। এলাকায় প্রবেশ করলে এখনো শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। পাকিস্তানের এই অঞ্চলটি দেশটির সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্রের বাজার হিসাবে পরিচিত। তবে নানা কারণে এখন আর সেই রমরমা নেই। প্রকাশ্যেই এখানে বিক্রি হয় বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের সব অস্ত্র। অত্যাধুনিক কালাশনিকভ থেকে শুরু করে এমপি-৫ পাওয়া যায় এখানে। দামও নাগালের মধ্যে। স্মার্টফোনের চেয়েও কম মূল্যে মিলছে আধুনিক সব অস্ত্র। রয়টার্সের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেখানকার সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়।






৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা আদিবাসী এই শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য উঁচু উঁচু পাহাড়। পেশোয়ারের দক্ষিণে অবস্থিত এই শহরটি গত এক দশক ধরে অপরাধ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে আসছিল। সব ধরনের অপরাধই এখানে হয়ে থাকে। যেন অপরাধের এক স্বর্গরাজ্য। চোরাচালান থেকে শুরু করে কম দামে মাদক, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে চুরির মালামালও পাওয়া যায় এখানে। শুধু তা-ই নয় বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সনদও মিলে এখানে।    






প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে অবৈধ ব্যবসা চললেও মূলত এর উত্থান হয় ১৯৮০ সালের দিকে। মুজাহিদরা আফগানিস্তানের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রথম অস্ত্র কেনা শুরু করেন এই এলাকা থেকেই। পরে শহরটি পাকিস্তানি তালেবানদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়।






তালেবান এই এলাকায় নিজেদের বানানো কঠোর নিয়ম ও বিচারব্যবস্থা চালু করে। ২০০৯ সালে এখানে পোল্যান্ডের প্রকৌশলী পিয়তার স্টানজ্যাককে গলা কেটে হত্যা করে তালেবানরা। 






দাররা এখন তালেবানমুক্ত হলেও অবৈধ অস্ত্রের বাজার ঠিকই রয়ে গেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এলাকাটিতে বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে এখানে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হতে পারে সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখন সতর্ক।






খিতাব গুল(৪৫) এখানকার প্রসিদ্ধ অস্ত্র প্রস্তুতকারক। দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্রের ব্যবসা করছেন তিনি।






খিতাব গুল বলেন, ‘নওয়াজ শরীফ সরকার এই সব অবৈধ ব্যবসা বন্ধে প্রতিটি জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করেছে।’   






তুরস্ক ও বুলগেরিয়ার তৈরি এমপি-৫ সাব-মেশিন গানের নকল তৈরির জন্য খিতাব গুল বেশ পরিচিত এখানে। এই অস্ত্রটি পুরো বিশ্বেই খুব জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই, সোয়াতসহ বিশেষ বাহিনীগুলো এই অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।   






এমপি-৫ অস্ত্রটির খুচরা মূল্য এক হাজার ডলার। কিন্তু গুলের তৈরি একই অস্ত্র এক বছরের গ্যারান্টিসহ বিক্রি করা হয় সাত হাজার রুপি বা ৬৭ ডলারে।






গুলের দাবি, তার বানানো অস্ত্র চমৎকারভাবে কাজ করবে। পরে গুল তার বানানো এমপি-৫ অস্ত্রটির পরীক্ষামূলক চালিয়ে দেখান।






এখানকার তৈরি অত্যাধুনিক কালাশনিকভ বিক্রি হয় মাত্র ১২৫ ডলারে। যা বেশিরভাগ স্মার্টফোনের চেয়েও কম দাম।   






গুল কারণ হিসেবে বলেন, ‘এখানকার কর্মীরা খুবই দক্ষ। তারা যেকোনো অস্ত্র একবার দেখালেই হুবহু নকল করতে পারে। গত দশ বছরে আমি ১০ হাজার অস্ত্র বিক্রি করেছি। অস্ত্র নিয়ে এখন পর্যন্ত একজন ব্যক্তিও অভিযোগ জানায়নি।’ 






করাচি শিপইয়ার্ড থেকে আনা লোহা থেকে গুলের ওয়ার্কশপে অস্ত্র তৈরি হয়। 






এই এলাকার অধিবাসীরা অস্ত্রের বাজারটিকে বৈধ হিসেবে দেখে। যা পশতুন ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত। এখানে বন্দুক ব্যবহার করাকে পুরুষত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। 






সাম্প্রতিককালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গি দমনে উঠেপড়ে লেগেছে। বিশেষ করে আদিবাসী এলাকাগুলোতে। ২০০৭ সালে তালেবান গঠিত হওয়ার পরের পরিস্থিতি থেকে এখনকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো।






দাররা এলাকার অনেক দোকানে এখন অস্ত্রের পরিবর্তে মুদি এবং ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের এখন মন্দ সময় যাচ্ছে। 






খিতাব গুল বলেন, ‘ওয়ার্কশপের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপের আগে প্রতিটি ওয়ার্কশপে দশটির বেশি অস্ত্র তৈরি হতো প্রতিদিন।এখন তারা মাত্র চারটি অস্ত্র তৈরি করেন।’ 






এই ধ্বসের কারণে হিসেবে পাকিস্তান সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে দায়ী করছেন অস্ত্র নির্মাতারা। কারণ চেকপয়েন্টগুলোতে ক্রেতাদের থামিয়ে দেয় তারা। অথচ এক সময় ক্রেতারা উন্মুক্তভাবে এখানে আসা-যাওয়া করতে পারতো। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশিদের এখানে প্রবেশ নিষেধ।  






সেনাবাহিনী এখানকার অস্ত্র বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন না।






তবে এখানকার অধিবাসীরা জানায়, তারা সরকারকে নিশ্চয়তা দিয়েছে এখানে তারা কোনো জঙ্গিকে আশ্রয় দিবেন না। সরকারি তরফ থেকে লাইসেন্স দেয়ারও দাবি জানান তারা।






অস্ত্র প্রস্তুতকারক মোজ্জামিল খান বলেন, ‘আমি এখানে গত ৩০ বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু এখন বেকার বসে আছি। লেদ মেশিনটি বিক্রি করা ছাড়া আমার আর এখন কোনো উপায় নেই।’






অস্ত্রের গুলি তৈরি করেন মোহাম্মদ কায়সার।






তিনি বলেন, ‘এখানে একসময় সাত হাজার অস্ত্রের দোকান ছিল। এখন অর্ধেকের বেশি বন্ধ। সরকার যদি নীতি পরিবর্তন না করে তাহলে দাররা এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’






দাররা ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বাদাম আকবর জানান, তিন হাজারের বেশি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার দক্ষ কর্মীদের এখন বাধ্য হয়ে অন্য কাজ শিখতে হচ্ছে। এই বাজারে আর কিছুই নেই। এখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, ব্যবসায়ও নেই। জীবন এখানে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।






(ঢাকাটাইম/২৮জুলাই/এসআই)