নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ আলতাদিঘী গ্রামে প্রায় ৪১ বিঘা আয়তনের ইজারা দেওয়া একটি জলাশয় দখল করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই দখল ও লুটপাটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এমপির ছেলের বিরুদ্ধে। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শনিবার সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আলতাদিঘী গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং গ্রামবাসীদের জিম্মি করে জলাশয় জবর দখল করে নেয়।
এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে থানা পুলিশকে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ দিঘীর একজন ইজারাদার আবদুস সামাদের। তিনি বলেন, উল্টো দখলকারী সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধমকিতে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে গতকাল রোববার বিকেলে ইজারাদারদের পক্ষে আসাদ হোসেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আরও একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, ওই গ্রামের ১৩ দশমিক ৫৩ একর (প্রায় ৪১ বিঘা) আয়তনের জলাশয়টি গত জুন মাসে সহ-অংশীদার হিসেবে আব্দুস সামাদ, আতোয়ার হোসেন ও আব্বাস আলীর নামে ইজারা দেওয়া হয়। গত চার মাস ধরে ওই পুকুরে মাছ চাষ করে আসছিলেন তারা। ইতিমধ্যে মাছ চাষ নিয়ে আব্দুস সামাদের সঙ্গে অপর দুজন আতোয়ার হোসেন ও আব্বাস আলীর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গত শনিবার সকাল আটটার দিকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম তরফদারের ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি ও ভাগিনা সাকিলের নেতৃত্বে আতোয়ার হোসেন ও আব্বাস আলীর লোকজন পুকুরটি দখল করে নেয়। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ২০০ কথিত সন্ত্রাসী গ্রামবাসীকে জিম্মি করে রাখে। এ সময় পুকুর পাহারাদারদের থাকার ঘর ভাঙচুর এবং মাছের খাদ্যের গোদামে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।
ইজারাদার আব্দুস সামাদ অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে পুকুরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। চার মাসে সেগুলোর আনুমানিক মূল্য দাঁড়িয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। শনিবার সাকলাইন মাহমুদ রকি ও ভাগিনা সাকিলের নেতৃত্বে আতোয়ার হোসেন ও আব্বাস আলীর প্রায় ২০০ জন সন্ত্রাসী সব মাছ লুট করে নেয়।
আব্দুস সামাদ বলেন, “এমপির ছেলে গায়ের জোরে পুকুর দখলে নিয়েছে। তার গুন্ডারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আমাদের। পুকুর রক্ষা দূরের কথা, আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।” এ ব্যাপারে তার পক্ষে তার ভাগনে মোজাফফর হোসেন গত শনিবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে মাছ মারা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।”
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার সকালে লাঠি, দা, রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায় ২০০ ব্যক্তি আলতাদিঘির চারপাশে অবস্থান নেয়। তারা গ্রামবাসীকে জিম্মি করে রাখে। গ্রামের লোকজন ভয়ে তাদের বাধা দেওয়ার সাহস পায়নি। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লুটপাট চালালেও পুলিশের কোনো লোকজনকে দেখা যায়নি।
ইজারাদার আব্দুস সামাদ বলেন, এ ব্যাপারে গতকাল রোববার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপিপুত্র সাকলাইন মাহমুদ রকি এ ব্যাপারে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তিনজন অংশীদারের মধ্যে পুকুরটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। আব্দুস সামাদ অপর দুজনকে বঞ্চিত করে আসছিলেন। বঞ্চিত লোকজনই পুকুর দখল ও মাছ ধরে নিয়ে যান।”
মহাদেবপুর থানার ওসি সাবের রেজা চৌধুরী বলেন, ওই পুকুর দখল ও মাছ লুটের ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। ইউএনওর কাছ থেকে দখল ও মাছ লুটকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলেও ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ওসি আরও বলেন, “জমিজমাসংক্রান্ত ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কাছে করা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে ইউএনও কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে পাঠালে এবং পুলিশের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ সেখানে যেত।”
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেবুননাহার জানান, সরকারি আইন মোতাবেক সহ-অংশীদার হিসেবে আব্দুস সামাদ, আতোয়ার হোসেন ও আব্বাস আলীকে পুকুর ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মাছ লুটের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক জানান, মাছ লুট করা ও শ্রমিকদের থাকার ঘর ও মাছের খাদ্য গোদামে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, অন্যায়কারী যেই হোক, অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/মোআ)