সুপ্রিমকোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় বিধি প্রণয়নের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৮ আগস্ট, ২০১৬ ২০:৪৪:১০

সুপ্রিমকোর্ট কমিটির সুপারিশ অনুসারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের চাকরি, বরখাস্তকরণের যে বিধি সরকার প্রণয়ন করেছে সেটি মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। সরকার প্রণিত রুলের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট কমিটি করার একটি সুপারিশ করেছে। যা আগামী ৬ নভেম্বরের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়কে গেজেট আকারে জানাতে বলেছে আপিল বিভাগ।
রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মাসদার হোসেন মামলার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
আদালতের আদেশের পর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সরকার যে রুলস প্রণয়ন করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠিয়েছে, তা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। মাসদার হোসেন মামলার রায়ে ৭ নম্বর দফায় উল্লেখ আছে, বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের ব্যাপারে যে রুলস প্রণয়ন করা হবে, তাতে শাসনের চেয়ে বিচার বিভাগের মতামতই প্রাধান্য পাবে।
মাহবুবে আলম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মতে, সরকার যে রুলস পাঠিয়েছে, তাতে যেভাবে মাসদার হোসেন মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে নেই। সেটা সুপ্রিমকোর্টের একটা কমিটি করে, রুলসটাকে সরকারি রুলসের সঙ্গে সংযোজন করে বিবেচনার জন্য তারা আদেশ দিয়েছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আদালত বলেছে, বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের চাকরি, বরখাস্তকরণের আইন প্রণয়ন এতদিনেও হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের মতো বিধি এখনো প্রয়োগ করা হচ্ছে। আপিল বিভাগ বলেছে, বহু আগেই এ ব্যাপারে রুলস প্রণয়ন করার জন্য সরকারকে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আদালতকে বলেছি, বিচার বিভাগ আইন বিভাগকে আইন প্রণয়নের জন্য সরাসরি বলতে পারে না। কারণ বিচার বিভাগের কাজ বিচার করা, আইন বিভাগের কাজ আইন করা। জিনিসটা সুপ্রিমকোর্টের ইচ্ছাটা প্রতিফলিত হোক, আদেশ আকারে যেন না যায়। এরপর আদালত সুপ্রিমকোর্ট কমিটির সংশোধনী অনুসারে রুলস প্রণয়ন করে গেজেট করে আগামী ৬ নভেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়।
১৯৮৯ সালে সরকার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কিছু পদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করে। এতে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে অসঙ্গতি দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার এই অসঙ্গতি দূর করার জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ জানুয়ারি জজ আদালতের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দেয়। প্রশাসন ক্যাডারের আপত্তির মুখে সরকার ওই বেতন স্কেল স্থগিত করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ জন বিচারক ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট পাঁচ দফা সুপারিশসহ ওই মামলার রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ ১৯৯৯ ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার ঐতিহাসিক রায়টি দেন। মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার আট বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/এমএবি/জেবি)