logo ১৮ এপ্রিল ২০২৫
ময়মনসিংহ
সংসদে প্রথম যারা কেমন তারা
মো. গোলাম কিবরিয়া, ময়মনসিংহ
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৩০:১৮
image




দশম জাতীয় সংসদে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সাতটিতেই রয়েছে একেবারে নবীন সাংসদ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয়জন ও জাতীয় পার্টির একজন।



ময়মনসিংহ জেলায় আওয়ামী লীগের ৭ ও জাতীয় পার্টির চারজন এমপি রয়েছেন। এর বাইরে সংরক্ষিত নারী আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য।



তিন বছর পূর্ণ হতে চলা বর্তমান সংসদের  ময়মনসিংহ জেলার এমপিদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন প্রথমবার সংসদে যাওয়া সদস্যরা। তাদের কেউ কেউ সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে পথ হাঁটছেন। আবার কারও সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীদের দূরত্ব যোজন যোজন।



উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। এরপর তিনি সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ভোটে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। লক্ষাধিক ভোট পাওয়ার নজির গড়েন প্রয়াত সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের এই ছেলে। বাবার পর ছেলের হাত ধরেই গফরগাঁওয়ে দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষাতেও এখন মডেল উপজেলার নাম গফরগাঁও।



গত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে না পারলেও এ ক্ষেত্রে সাফল্য  দেখিয়েছেন বাবেল। তবে দলের ভেতর তার বিরোধী লোকেরও অভাব নেই। বাবেল গোলন্দাজ মনে করেন, কাজ করলে সমালোচনা থাকবেই। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দলীয় ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই সফল হতে পারবে না। সময়ের স্রোতে তারা হারিয়ে যাবেন।’



সংসদ সদস্য হিসেবে একেবারেই নবীন ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের জুয়েল আরেং ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ। সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের মৃত্যুর পর ছেলে জুয়েল আর সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর জেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন মাস দেড়েক আগে। তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা এখনো হিসাব করার সময় আসেনি।



মাত্র তিন মাস আগে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন শরীফ আহমেদ। তার বাবা প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুল হক ছিলেন আলোচিত রাজনীতিক। উন্নয়নের রুটিন ওয়ার্কে সফলতা থাকলেও তার লোকজনের দাপটে সাবেক সংসদ সদস্য বেলালের অনুসারীরা টিকতে পারছেন না। ফলে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে শরিফ আহমেদের।



ময়মনসিংহের নির্বাচনী মানচিত্রে চমক হলো ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনটি গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। পরে প্রবীণ রাজনীতিক প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্মমন্ত্রী এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা জোহুরা রাণীকে জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য করা হয়।



মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলীয় সমর্থন হারান ফাতেমা জোহুরা রাণীর স্বামী সত্তরের দশকের ছাত্রনেতা, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তারা। এরপর দলের হাইকমান্ড এই নারীনেত্রীকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করে।



দলের এ সিদ্ধান্ত তৃণমূলেও সাড়া ফেলে বেশ। জেলা সদরে আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় সংরক্ষিত আসনের এ সংসদ সদস্যই এখন সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।



দীর্ঘ সময় পর নিজেদের হারানো ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন পুনরুদ্ধার করেছে জাতীয় পার্টি। এ আসন থেকে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক ভিত বিনির্মাণে কাজ  করেছেন নবীন এ সংসদ সদস্য।



ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব প্রতিনিয়তই বাড়ছে। নিজের অনুসারীরা উপজেলার কোথাও দলীয় কর্মসূচি দিলে তার বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম আলাদা কর্মসূচি দেন একই স্থানে।



ফলে ১৪৪ ধারার গ্যাঁড়াকলে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। রয়েছে পাল্টাপাল্টি উপজেলা কমিটিও। সবশেষ স্থানীয় এক ইউনিয়নে কাজী নিয়োগে জামায়াত নেতার আবেদনে সুপারিশ করে চরম বিতর্কের জন্ম দেন এমপি তুহিন। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন এ সাংসদ।



(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/মোআ)