logo ১৬ আগস্ট ২০২৫
গ্রামের শিশুদের ঈদ আনন্দ
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:২০:১২
image




‘বিষ্টিত ভিজ্জা বিয়ানে ঈদের নামাজ পইরা ক্ষেতে গেছি। ক্ষেতের কাম সাইরা বাড়িত আইলে বাজান ছিরা পুরান একটা জুতা দিছে। হেই জুতা বেইচ্চা কটকডি কিনছি। ক্ষেত থেইকা একটা ব্যাঙ ধইরা আনছি। ব্যাঙডারে বাইন্দা রইসুল, আমিন আর কোরবানের নিকট দিয়া আরেকটা ব্যাঙ খুজবার গেছিলাম । কিন্তু পাইলাম না। আরেকটা ব্যাঙ পাইলে মজা অইত। দুই ব্যাঙরে এক কইরা বিয়া দিতাম।



সহালে মা রাইন্দা ঘানি টানতাছে। তেলের অর্ডার পাইছে। বাজান আর আব্দুল চাচা এহনো ক্ষেতে আছে। বাজান কইছে বাড়িত থন খাইয়া আবার ক্ষেতে আয় মেলা কাম পইরা রইছে। বাড়িত আইয়া ফডাফট খাইয়া ফাঁহে দোহানে গেছিলাম।’



আব্দুল চাচার দোহানের টেলিভিশনে  ডিশ আছে। ওই দোহানে অগি, টমি, ডরিমন এগুলা কাটুন দেখতে ভালা লাগে। দোহানে যাইয়া দেহি বড়রা ভূতের সিনামা দেখতাছে। দোহানদার চাচারে কইলাম চাচা একটু কাটুন দেইন দেহি। অমনি দোহানে বহা নুরুল চাচা আমার কানে চিমটি মারছে। আর ধমক দিয়া কইছে যা বেডা টেলিভিশন দেহা ভালা না। দোহানদার চাচা কইছে কাটুন দেখবার চাইলে দুপুরে আহিস তহন সবাই যাবো গা। টেহা লইয়া আহিস দোহানে লাড়–, খুরমা, চানাচুর আরো অনেক ভালা ভালা মাল উডাইছি।’



কথাগুলো বলছিলো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল দাওগাঁও ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কৃষক রায়হানের শিশু পুত্র সাইফুল।



পারিবারিক অশিক্ষা আর আর্থিক দৈন্যতা সাইফুলের পরিবারের নিত্যসঙ্গী। মা জরিনাকে সারাদিন সরিষা তেল ভাঙার ঘানি টানতে হয়। ঘানি টানার গরু নেই তাদের। তাই ফসলও উৎপাদন করতে হয় গরুর বিকল্প হিসেবে নিজেদেরকেই।



সকালেই বায়না ধরে মায়ের নিকট থেকে ১০ টাকা নিয়ে সাইফুল তার বন্ধু রইসুল, আমিন আর কোরবানকে নিয়ে দোকানে যায় টিভি দেখতে। দোকানদার চাচা ১০ টাকা রেখে একটি পটেটো চিপ্স ধরিয়ে দিয়ে বলে এহনও দোকান খালি অয় নাই। কাটুন দেখতে অইলে রাইতে আহিস। এইডা কেমনে সম্ভব চাচা। রাইতে বাড়ির বাইরে আইলে বাজান মাইর দিবো। তাইলে এহন যা কাইল আহিস। বাড়ির পাশে মাডে দুলনা আইছে। হক্কলে মিল্লা দুলনায় চরছিলাম।



ঈদের দিন আর কার্টুন দেখা হলো না সাইফুলদের। ঈদের নতুন জামা-কাপড় কোথায় তোমাদের- প্রশ্ন করা হলে এই শিশুরা জানায়, ঈদের নামাজ পড়ার পর নতুন জামা-কাপড় আলমারিতে তুলে রাখা হয়েছে। এগুলো পড়ে খেলাধূলা করলে ময়লা হয়ে যাবে তাই। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে গেলেই কেবল নতুন জামা-কাপড় পড়া হয় তাদের।



(ঢাকাটাইমস/১৩ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)