অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধেছে ভারতের দুটি রাজ্যে। গত দু’দিন ধরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে কাবেরী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে অশান্তির আগুন জ্বলছে। রাজ্য দুটিতে দেখা দিয়েছে দাঙ্গা-সহিংসতা। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবেরি নদীর কিছু পানি প্রতিবেশী তামিলনাড়ু রাজ্যকে ছেড়ে দিতে কর্নাটক রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়ে সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। কিন্তু পানি সরবরাহের পরিমাণ আর বাড়াতে রাজি নয় কর্নাটক। সুপ্রিম কোর্টের এ রায় নিয়েই মূলত বেঙ্গালুরুতে দাঙ্গা শুরু হয়। সোমবার সকাল থেকেই দু’রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুসহ কর্নাটকের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তামিলনাড়ুর নম্বরপ্লেট লাগানো গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ভাঙচুর হয় স্কুলবাসেও। বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ স্কুল-কলেজ। দাঙ্গার জেরে অচল হয়ে যায় জনজীবন। ১৬টি জায়গায় কারফিউ জারি করা হয়। বেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে মারা যান একজন।
চলমান সহিংসতায় থমকে গেছে ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ খ্যাত বেঙ্গালুরু। কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। আউটসোর্সিং কোম্পানি অ্যাকসেনচার, ই-কর্মাসের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আমাজন, ফ্লিপকার্ট, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উইপ্রো, ইনফোসিস, বিরপো, ওরাকল ও এমফাসিসসহ ভারতীয় ও বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন বলেছে, বেঙ্গালুরুর বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা পণ্য সরবরাহ ফের শুরু করব।
শিল্প সংগঠন অ্যাসোচ্যাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই সহিংসতার ফলে কর্নাটক, বিশেষ করে বেঙ্গালুরু প্রায় ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি রুপির আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
সংগঠনটির মহাসচিব ডি এস রাওয়াত বলেন, ‘বেঙ্গালুরুকে ঘিরে ভারত ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে যে ভাবমূর্তি গড়েছিল তার মুখে কালি পড়েছে।’
চলতি সপ্তাহের এই সংঘাতে গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে স্কুলবাসেও। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ স্কুল-কলেজ। দাঙ্গার জেরে অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন, জারি করা হয়েছে কারফিউ।
গত দুদিন ধরে অশান্তির আগুন থামতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে দেখা করার জন্যও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি অনুরোধ জানান।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নিজের হাতে আইন তুলে নেয়াটা কোনো বিকল্প নয়। হিংসা দিয়েও কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।’
কাবেরি নদীর উৎস কর্নাটকে হলেও তা তামিলনাড়ুর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর পানি বণ্টন নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বিবাদ চলে আসছে। কৃষিতে সেচের জন্য দুটি রাজ্যেই কাবেরির পানির উপর নির্ভরশীল।
বিবিসি জানায়, একই ইস্যুতে ১৯৯১ সালে বেঙ্গালুরুতে তামিল বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। তখন প্রায় দুই লাখ তামিল নাগরিক শহর ছাড়তে বাধ্য হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এসআই)