মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিতে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:২৭:৪২

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অন্তত এক হাজার মানুষের ভেতর এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন শিগগির জরুরি বৈঠক ডাকতে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে দেশটির পত্রিকাগুলো।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘যেভাবেই হোক না কেন চিকুনগুনিয়া মোকাবেলা করা হবে’। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা জানিয়েছে, চিকুনগুনিয়া বয়স্ক লোকেদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এটা সংক্রামক রোগ নয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই মশানিধনে ওষুধ স্প্রে করা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্প্রে করা হচ্ছে। এসব এলাকায় এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।
চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে আফ্রিকান মারুন্ডি ভাষা থেকে। এর অর্থ ভেঙে যাওয়া বা বাঁকা হওয়া। চিকুনগুনিয়া জ্বরে আর্থারাইটিসের মতো হাত পা-ব্যথা হওয়ার উপসর্গ থেকে এই নামটি এসেছে। ১৯৫২-৫৩ সালে তানজানিয়াতে এই রোগের আবির্ভাব হয়। পরে ১৯৬০ এবং ১৯৮২ সালে দক্ষিণ এশিয়াতে চিকুনগুনিয়ার প্রদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬০ সালে ব্যাঙ্ককে এই ভাইরাস শনাক্ত করা যায়।
কলকাতা, ভেলোর ও মহারাষ্ট্রে ১৯৬৪ সালে, শ্রীলঙ্কায় ১৯৬৯ সালে, ভিয়েতনামে ১৯৭৫ সালে এবং ১৯৮২ সালে ইন্দোনেশিয়াতে এই রোগ দেখা দেয়।
এর পরে দক্ষিণ এশিয়াতে প্রায় ২০ বছর চিকুনগুনিয়া রোগ দেখা দেয়নি। ২০০৫-২০০৬ সালে ভারতে আবার চিকুনগুনিয়া দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের রাজশাহীতে চিকুনগুনিয়া দেখা দেয়। এছাড়া ঢাকার দোহারেও এই রোগ দেখা দেয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে চিকুনগুনিয়ার প্রদুর্ভাব আবার বাংলাদেশে দেখা দেয়।
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসে এর কারণে হয়। এটি একটি মশাবাহিত ভাইরাস। এডিস মশা এর বাহক। এডিস এজেপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস মশা এর বাহক। মানুষের দেহে এই দুই প্রকার মশার মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়ায়।
চিকনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর হয়। জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে জয়েন্টে ব্যথা। হাত-পা ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ভাব এবং র্যাস হয়। এছাড়া কনজাংটিভাইটিসের মতো উপসর্গও দেখা যায়। এই জ্বর দুই থেকে ১২ দিন থাকতে পারে। তবে সাধারণত তিন থেকে সাত দিন থাকে। জয়েন্টের ব্যথা মাসাধিককাল স্থায়ী হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া হয়েছে কিনা সেটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে জ্বরের যে চিকিৎসা দেয়া হয় সেরকম চিকিৎসাই নেয়া প্রয়োজন। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল দিয়ে এই জ্বরের চিকিৎসা করা হয়। আর্থারাইটিসের জন্য ক্লোরোকুইন দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এসপিরিন নেয়া যাবে না। ঠিক যেমনটি ডেঙ্গু জ্বরে নেয়া যায় না।
(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/ ইএস)