জাপানীদের দাবি তারা ১৮৬৮ সালে জাপানে রিকশা আবিষ্কার করেন । আবার মার্কিনীদের দাবি, ১৮৪৮ সালে তারা এটি আবিষ্কার করেন । ওই দেশগুলিতে এখন রিকশার প্রচলন আছে কি না জানা নেই । তবে আমাদের দেশে এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে রিকশা নেই । এই রিকশা যারা চালান তাদের কথা আমরা কতটুকুই বা ভাবি।
একবিংশ শতাব্দীর উপান্তে সভ্যতার এক সুউচ্চ অবস্থানে উপনীত হয়েছে মানুষ। জ্ঞান- বিজ্ঞানের বিকাশ জীবনযাপনকে করেছে সহজ। কিন্তু অনুন্নত দেশগুলোর সভ্যতার শীর্ষযুগের সুযোগ-সুবিধা থেকে অধিকাংশেই বঞ্চিত। এখানে অন্ন সংগ্রহের জন্য মানুষকে বহন করতে হয় মানুষের বোঝা । আমাদের চোখের সামনে তিন চাকার এক মানবচালিত রিকশা বিকল্পহীন।
বিগত বছরগুলিতে ময়মনসিংহ এবং উপজেলার শহরগুলিতে অন্যতম সমস্যা হিসেবে পরিণত হয়েছে , কিন্তু একথাও সত্য যে রিকশার সঙ্গে শহর বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক । তা সত্ত্বেও সময়ের নির্মম চাপে একদিন হয়তো শহর থেকে উঠে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ ত্রিচক্রযানটি।
ময়মনসিংহ এবং উপজেলা শহরগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে রিকশার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। তবে রিকশার এই বিরামহীন বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলছে দারুণভাবে।
গ্রাম থেকে নিঃস্ব হয়ে মানুষ কাজের অন্বেষণে ছুটে আসে শহরে। কোন কাজ না পেয়ে রিকশা চালায় এরা।
কয়েকজন রিকশাওয়ালা জানান, গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা রোজগার করা যায়। মালিকের ভাড়া বাদ দিয়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা থাকে। এ দিয়েই চালাতে হয় সংসার। অর্থ সংকটে ভাল বাড়ি-ঘর না পেয়ে ছাপড়া টিনের ঘর বা বস্তিতে রাত কাটাতে হয়। ছেলে-মেয়ে , বউ, বাপ-মা সবাইকে খাওয়াতে হয় এই রিকশার উপার্যনের অর্থ দিয়েই। রোগ হলে কবিরাজি ওষুধ খেতে হয়। হাসপাতালে রিকশাওয়ালা পরিচয় দিলে গুরুত্ব দেয় না।
সময়ের কথা ভেবে বাড়ির কাছে কবিরাজবাড়ি দৌড়াতে হয়। ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সের কয়েকজন রিকশাওয়ালা জানান , এ বয়সে হাতে পায়ে শক্তি পাওয়া যায় না , এর পরও রয়েছে শরীরের অসুখ। আস্তে চালালে যাত্রীর গাল মন্দ খেতে হয়। শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করে, তবুও জীবিকার তাগিদে চালাতে হয় রিকশা। যদিও রিকশায় যোগ হয়েছে ব্যাটারি। এতে অনেকাংশে কমেছে কায়িকশ্রম।
ময়মনসিংহে রিকশা চালকের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও অধিক। এদের উপার্জিত অর্থে ২০ হাজার মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পড়ে কোন মতে চলে সংসার।
(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)