এখনই মরে যেতে পারলে খুশি হতেন শতবর্ষী আছিরন বেগম ওরফে পাঁচকানি। এখনো সামান্য হেঁটে ভিক্ষা করতে পারছেন। কিন্তু যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন কী হবে তার।
রাজবাড়ীর খামারমাগুরা গ্রামে পাটকাঠি ঘেরা একটি ছোট ঘরে বাস আছিরন বেগমের। গ্রামটি জেলা শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আছিরন বেগমের বয়স ১২০-১২৫ বছর। ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার বয়স ১০৮ বছর, জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ জানুয়ারি। আছিরন বেগমের দাবি, সেখানে তার বয়স কম দেখানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে আছিরন বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তিনি ভিক্ষা করতে গেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভূমিহীন আছিরন বেগমকে পাওয়া যায় স্থানীয় একটি বাজারে।
আছিরন বেগমের বিয়ের অল্প দিনেই বাবা-মাকে হারান তিনি। এর কিছুদিন পর কলেরায় মারা যান স্বামী জনি উদ্দিন মোল্যা। এরপর থেকে নিঃসন্তান আছিরন একা একা জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জীবনসায়াহ্নে এসে অসহায় হয়ে পড়েছেন শতবর্ষী এই নারী। বলেন, এখন ভিক্ষার জন্য এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে খুব কষ্ট হয় তার।
নিজের বয়সের ব্যাপারে আছিরন বলেন, ‘একসময় কড়ি দিয়ে বাজার করে খেতাম আমি। কিন্তু সাহেবরা (ভোটার তালিকাকারী) অবিশ্বাস করে আমার বয়স কম দেখিয়েছে।’
রাষ্ট্র থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পান কি না জানতে চাইলে আছিরন বেগম বলেন, গত বছর স্থানীয় মেম্বার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয় তাকে। ভাতা ও ভিক্ষার টাকা দিয়েই কোনো রকমে খেয়ে-না খেয়ে দিন পার হচ্ছে তার।
আছিরন বেগম একসময় কান্না করতে করতে বলেন, ‘আল্লাহ আমার কপালে কষ্ট লিখে রেখেছে, তাই কষ্টে আছি। আমার তো কোনো জমিজমা নেই, কোনো সন্তান-সন্ততি নেই, তাই কষ্ট করে ভিক্ষা করি।’
এখনই তিনি মারা গেলে কোনো কষ্ট থাকবে না জানিয়ে আছিরন বলেন, ‘কিন্তু মৃত্যুর আগে যদি আমি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকি, তখন কে দেখবে আমাকে। কে খাওয়াবে। এই ভাবনা অনেক বেশি কষ্ট দেয় আমাকে।’
কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে নেবেন কি না জানতে চাইলে আছিরন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এমন মানুষ কি আর এই দুনিয়াতে আছে যে বৃদ্ধদের সাহায্য করবে!’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ইউসুফ শেখ বলেন, ‘আমরা পরিষদ থেকে শুধু বয়স্ক ভাতা এবং দুই ঈদে নামমাত্র কিছু সাহায্য ছাড়া অন্যকিছু দিতে পারি না।’
স্থানীয় শিক্ষক তপন কুমার সরকার বলেন, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো এমন বয়সে আছিরন বেগমের এই কষ্ট দূর করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র থেকে বয়স্কদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানো দরকার।
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/মোআ)