logo ০২ জুলাই ২০২৫
বেদেদের জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:১৬:৫৫
image




ময়মনসিংহে বেদে সম্প্রদায়ের চিরাচরিত জীবনধারায় পরিবর্তন আসছে। আজন্ম পানিতে ভেসে বেড়ানো,  জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তথা জীবনযাপন জলের মাঝে থাকলেও ধীরে ধীরে ডাঙায় উঠে আসছে তারা। কুপি-হারিকেনের আলো-আঁধারি পলিথিনে মোড়ানো ঘরে এখন সৌর বিদ্যুতের আলো। সন্ধ্যার পর তাদের ঘরে ডেকসেটে বাজে গান, চলে টেলিভিশনও। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করে না এমন একটি পরিবারও খুঁজে পাওয়া যাবে না বেদে সম্প্রদায়ে।



তবে পেশার বদল ঘটেনি এখনো অধিকাংশ বেদে সম্প্রদায়ে। শঙ্খিনী, পদ্মিনী, কালনাগ, গোখরা, আহলাদ, দারাজ, বাঁশপাতা, আরো কত কত জাতের সাপ আর বেজি নিত্যসঙ্গী তাদের। বাক্স ভরা এসব সরীসৃপ আর বেদে বা বাইদ্দারা জীবন ধারণের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।



সাপের খেলা দেখুন আর রোগ সারাতে সাদা লজ্জাবতী নিন, বিনিময়ে সাপকে দুধ-মাছ খাওয়ার জন্য কিছু দিতে হয়। এ ধারা চলে আসছে কত কত যুগ ধরে।  আর তা দিয়ে চলে আসছে সাপ ও সাপুড়েদের জীবন।



খোলা আকাশের নিচে, গাছতলায়, অস্থায়ী ঝুপরিতে, রেললাইনের ধারে, নদীর পাড়ে নৌকায় এদের বসবাস। সাপ ধরা আর সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর কৌশলই এদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। নারীরা ছোট বাক্সে সাপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরে বাত ছাড়াতে চোঙা দিয়ে মানুষের শরীর থেকে রক্ত আনা, দাঁতের পোকা বের করা, ইমিটেশনের গহনা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের খাবারের জোগান দেয়। সংখ্যায় অতি নগণ্য হলেও এদের ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।



সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় বেদে সম্প্রদায়ের সংখ্যার বিষয়টি জানা যায় না। এরা জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি অনীহ বলে প্রতি পরিবারে ছেলেমেয়ে চার-পাঁচজনের কম নয়। বেদে সম্প্রদায়ের উজ্জল, হারুন, সেলিম, ওসমান, ফেরদৌস, আরিফ জানান, তাদের জমিজমা না থাকায় কোনো চিন্তাভাবনা নেই। দুঃখ একটাই- যুগপরম্পরায় এরা নদীপথে নৌকায় চলাফেরা করত। এখন বহু নদনদী শুকিয়ে গেছে।



বেদেরা জানায়, সাপের খেলা দেখিয়ে, সাদা লজ্জাবতী বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায়, তার সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায় সাপের খাদ্য ও চিকিৎসায়।  স্থলপথে যাতায়াতে বাস, রিকশা ও ভ্যান ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বছরের অনেক সময় বেকার বসে থাকতে হয়।  তখন খাদ্যাভাবে তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন সাপগুলো হাড্ডিসার হয়ে পড়ে।



সারা বছর মানুষের রোগব্যাধির চিকিৎসা করলেও নিজেরা ভোগেন বিনা চিকিৎসায়।



বেদেরা জানান, দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারে না তারা। মজমা জমিয়ে সাপখেলা দেখানো, লজ্জাবতী গাছ সংগ্রহ, তাবিজ-কবজ কেনা, তৈরী ও বিক্রি করতে করতে সময় যায়। এ থেকে যা আয় হয় তার পুরোটা খরচ হয়ে যায় সাপ ও পরিবারের খানাখাদ্যে।



এর মধ্যেও সাপের দংশনের ঘটনা ঘটে। তখন তেমন কিছু করার থাকে না তাদের। সাপের দংশনে বেদের মৃত্যুর ঘটনা নেহাত কম নয়।



(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টম্বর/মোআ)