logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
ভারতের প্রস্তুতির অভাবে নিষ্ক্রিয় সুসংহত চেকপোস্ট
মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর) থেকে
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৯:১২:১৭
image




বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে ঘটা করে উদ্বোধন করা সুসংহত চেকপোস্ট পুরোপুরি চালু হয়নি দুই মাসেও। অথচ গত ২০ জুলাইয়ে এটি উদ্বোধন করার দিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি আরও সহজ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। অথচ ওপারের প্রস্তুতির অভাবে এখনো নিষ্ক্রিয় সুসংহত চেকেপাস্টটি কোনো কাজে আসছে না ব্যবসায়ীদের।







বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলপথে বাণিজ্যের সিংহভাগই হয় এই বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। কিন্তু নানা সমস্যা আর সুযোগ-সুবিধার অভাবে আমদানি-রপ্তানিতে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এ ভোগান্তি লাঘব করতেই নির্মাণ করা হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বা সুসংহত চেকপোস্ট।






এর বাস্তবায়ন দেখতে শুক্রবার দুপুরে পেট্রাপোল ও বেনাপোল পরিদর্শন করেন দিল্লিতে নিয়োজিত বাংলাদেশি হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। এরপর দুপুরে এপারে বেনাপোল কাস্টম অডিটরিয়ামে বন্দর, কাস্টম ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।






সেখানে হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের উদ্বোধন করেন, তার বাস্তবায়ন দেখতে পরিদর্শনে এসেছেন তিনি।






এই সভাতেই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতারা তার কাছে অভিযোগ করেন, বেনাপোল-পেট্রাপোল ইনটিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধন হলেও এটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।






বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে বাংলাদেশ। প্রতিদিন ভারত থেকে চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আসে ভারত থেকে। আর দুই শতাধিক ট্রাক পণ্য নিয়ে যায় ভারতে। একই পথে পর্যটকসহ নানা কাজে যাত্রীরা দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। এতে করে বন্দরে পণ্যজট লেগেই থাকে। এই পণ্যজট কমাতেই দুই দেশ এই উদ্যোগ নিয়েছিল।






কিন্তু বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত থাকলেও ওপারের পেট্রাপোল বন্দর ও কাস্টম কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত না থাকায় ওই সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী সব যানবাহন চলতে পারছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কেবল নিটল-টাটার আমদানি করা বাস ও ট্রাকের চ্যাসিসগুলো এই পথে আমদানি হচ্ছে।






গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ‘সুসংহত চেকপোস্ট’ (ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী টার্মিনাল, লিংক রোড, বাস টার্মিনালসহ আরো কয়েকটি স্থাপনাও উদ্বোধন করেন।






চেকপোস্টটির প্রধান নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দুই শতাধিক সদস্য। পণ্যবাহী এক হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতার ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টটি বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আরো গতিশীলতা আনবে বলে মনে করেন কাস্টম কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। ট্রাক টার্মিনাল ছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম, আমদানি-রপ্তানি এলাকা, স্ক্যানিং মেশিনসহ আধুনিক বন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে।






ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে বাংলাদেশ সরকার বেনাপোল বন্দরে বাইপাস (লিংক রোড) সড়ক নির্মাণ করে। সড়কটি দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ট্রাক চলাচল। কিন্তু ভারতীয় কাস্টম কর্তৃপক্ষের জনবল সংকটের কারণে পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকছে না বাংলাদেশে। ফলে চেকপোস্ট থেকে বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত প্রতিদিন থাকছে দীর্ঘ যানজট। বিভিন্ন যানবাহন ও যাত্রীদের আটকে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেককে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে দেখা যায়।






ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পেট্রাপোলের ট্রাক টার্মিনালের একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে বাংলাদেশগামী আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে। মূলত তাদের বাধার কারণে লিংক রোড দিয়ে আমদানি কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।






বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) নিতাই চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমাদের এখানে ৩৮টি শেডসহ ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। এতে আমদানি করা ৩৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য রাখা যায়। ভারতের নতুন লিংক রোড দিয়ে আমদানি পণ্য এলে তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত আমরা। কিন্তু ভারতের কাস্টম কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত না থাকায় আমদানি পণ্য আসছে না। তবে রপ্তানি পণ্য কিছু যাচ্ছে সড়কটি দিয়ে।’






বেনাপোল বন্দরের এই কর্মকর্তা জানান, এ সমস্যা নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। অচিরেই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে ওপার থেকে।






পেট্রাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, সুসংহত চেকপোস্টে কাস্টম অফিসগুলো এখনো নতুন ভবনে সরিয়ে নিতে না পারায় এই পথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু করা যায়নি।






ভারত-বাংলাদেশ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা কাস্টম ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে ওপারে গিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে, প্রতিদিন এক হাজার পণ্যবাহী গাড়ি লিংক রোড দিয়ে পাঠাবে বাংলাদেশে। কিন্তু সক্ষমতা না থাকায় বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ তা নিতে রাজি হয়নি। লিংক রোডটি চালু হলে আমাদের অনেক হয়রানি কমে যাবে। তা ছাড়া দ্রুততম সময়ে আমদানিকৃত গাড়ি বেনাপোল বন্দরে আসতে পারবে।’






বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কাস্টম ও বন্দরের সভায় আমরা উভয় দেশের বাইপাস রোডটি চালু করতে তাগিদ দিয়ে আসছি। বেনাপোলের কাস্টম কর্তৃপক্ষ ভারতের কাস্টমকে বিষয়টি অবহিত করবে বলে জানিয়েছে। উভয় দেশের বাইপাস সড়ক দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করলে যানজট ও পণ্যজট থাকবে না। তা হলে এখান দিয়ে আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়বে।






(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/মোআ)