রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ডিজিটাল হাজিরায় আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল হাজিরার ঘোষণা দিলে শিক্ষকরা এর বিরোধিতা শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৮ আগস্ট ৪৬৭তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ডিজিটাল অ্যাটেন্ডেন্স মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে হাজিরা প্রদান করতে হবে। যা শুরু হবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে।’
এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসেন শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক সেবার বিরুদ্ধে তারা কেউ নন। তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর যে চিঠির মাধ্যমে স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের বিষয়টি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জানানো হয়েছে- তাতে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক খাদেমুল ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘শিক্ষকদের বলা হচ্ছে না যে তাদের প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিভাগে অবস্থান করতে হবে বা ক্লাস নিতে হবে। এখানে বলা হয়েছে, আপনারা সারাদিনে শুধুমাত্র একবার যেকোন সময় বিভাগে এসে ওই ডিভাইসে টাচ করলেই হাজিরা হয়ে যাবে। এখানে তাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশনে বাধা প্রদান করছেন।’
আইডি কার্ড প্রজেক্টের শুরু নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত প্রশাসন আব্দুস সোবহানের সময়ে এই প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। তখন এই প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন অধ্যাপক ড. রকীব আহমদ। তখনই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল হাজিরার বিষয়টি মাথায় নিয়ে আইডি কার্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ৪০০ টাকা করে নেয়া শুরু করে বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ওই টাকা বিবিধ ফান্ডে জমা করে অন্যখাতে খরচ হয়ে যায়। এরপর এ প্রশাসন এসে আবার ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করে কোন ধরনের ফান্ড ছাড়াই। আর এখন এসে তিনিই শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নেয়ার বিষয়ে প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করছেন। এটা আমরা তার কাছ থেকে কখনই আশা করিনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক রকীব আহমদ বলেন, ‘আমার সময়ে এ প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল হাজিরাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশনে মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষক এ ডিজিটালাইজেশনে সমর্থন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রশাসন এসে ৭৩’র অ্যাক্ট উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দিনে শুধুমাত্র একবার হাজিরা দিতে হবে বিষয়টি তেমন না, এটার একটিমাত্র উদ্দেশ্য শিক্ষকদের ‘বেঁধে ফেলা’। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মত দেয়ার পরও এটা তারা কীভাবে কার্যকর করছে? আর প্রশাসন থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে এখানে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়নি।’
ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া বাধা দেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শাহ্ আজম বলেন, ‘আমরাও চাই ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মতো শিক্ষকদের নিয়মিত হাজিরা নেয়া মানে তাদের অসম্মান করা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছি। আশা করছি বিষয়টি তারা ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কতিপয় শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। গুটিকয়েক শিক্ষকের অনিয়মের জন্য তো আর পুরো শিক্ষক সমাজকে এভাবে অসম্মান করা যায় না।’
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে অসম্মান বা নজরদারি করার জন্য ডিজিটাল হাজিরা প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে না। শিক্ষকরা পুরো বিষয়টি ভালোভাবে না জেনেই এর বিরোধিতা করছেন। এটা সার্বিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক সেবার মান বৃদ্ধির জন্যই করা হয়েছে।’