logo ০৬ মে ২০২৫
ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা জামায়াতের
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
১৫ নভেম্বর, ২০১৩ ১৪:১৩:২৪
image

ঢাকা: ‘এইডা কথা হইলো? মুসলমান হইয়া মুসলমানরে মারে?’—রাজধানীর তেগজাঁও এলাকায় রিক্সা চালাতে চালাতে বলছিলেন একজন।


‘আওয়ামী লীগ দেশ ভালই চালাইছে। কাজও করছে ভাল। কিন্তু মুসলমানদের এইভাবে হয়রানি করাটা ঠিক হয়নাই। এদেরকে যুদ্ধের সময় তো দুই পক্ষই মারে। এখন সাঈদী সাব সেই সময় কি করছিল না করছিল, এখন তো তিনি ইসলামের কথা বলেন। তাকে এভাবে হেনস্তা না করলেই পারতো’- কিশোরগঞ্জের নগুয়া এলাকায় বলছিলেন এক যুবক।


বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নতুন না। পাকিস্তান আমলে তো বটে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ ধর্মভিত্তিক সব কটি দল একে ধর্মযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। জামায়াত এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা পাকিস্তানকে পূণ্যভূমি আখ্যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের শত্রু আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন।


মুক্তিযুদ্ধের পর জামায়াত নিষিদ্ধ থাকা অবস্থাতেও মসজিদ-মাদ্রাসাকেন্দ্রিক প্রচার চালিয়ে সে সময় অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। বর্তমান সরকারের আমলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সরকারের ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছে তারা।


২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার একটি মামলায় নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের আটক দেখানো হয়। তাদের গ্রেপ্তারের আগে থেকেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবে বিচারের ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াত। কিন্তু নেতাদের গ্রেপ্তারের পর একে একে রায় হয়ে গেছে পাঁচ নেতার। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়ে হবে সিদ্ধান্ত। ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ পর্যায়ে আছে দলের আমিরেরও। বারাবর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও কার্যকর কিছু করতে পারছে না জামায়াত। এই অবস্থায় ধর্মকেই বর্ম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে দলটি।


আঠারোদলীয় জোটে জামায়াতের শরিক ধর্মভিত্তিক একটি দলের ‘র’ অদ্যাক্ষরের এক নেতা বলেন, ‘জামায়াত শেষমেষ ইসলাম দিয়ে সব মোকাবেলার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে সরকারকে সাবধান থাকতে হবে’।


জামায়াত নেতাদের দাবি, যেহেতু তারা ইসলামের পক্ষে কথা বলেন, তাই সরকার তাদের কণ্ঠ থামিয়ে দিতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন অপরাধের অভিযোগ তুলছে। জামায়াতের ছাত্র এবং ছাত্রী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকেও তৃণমূল পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


জামায়াত কেবল কেবল ইসলামকে বর্ম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা না, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসান। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় শুনানি শেষ পর্যায়ে চলে আসার পর তার এলাকা পাবনার সাঁথিয়ায় ফেসবুকে মহানবী (সা.) কে অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকে এর অংশ হিসেবেই মনে করছেন তিনি। এর আগেও কক্সবাজারের রামুতে একইভাবে এক বৌদ্ধ যুবকের নামে ফেসবুক পেজ খুলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে বৌদ্ধদের বাড়িঘর এবং উপাসনালয়ে নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়।


জানতে চাইলে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জিয়াউল হাসান বলেন, ‘জামায়াত কেবল এখ না, মুক্তিযদ্ধের সময়ও বলেছিল পাকিস্তান না থাকলে ইসলাম থাকবে না। তারা কোরআন মানে না, সংবিধান মানে না, তারা চায় মওদুদীবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়’। মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘সাঈদীর রায়ের পর চাঁদে তাকে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে সরকারি সম্পত্তি, থানায় আক্রমণ করেছে। কিন্তু হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে কোনো নবী রাসুলকে চাঁদে দেখা যায়নি। তাহলে কি সাঈদীকে এদের চেয়ে বড় হিসেবে দেখাতে চায় জামায়াত?’।


একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ইসলামকে ব্যবহার করা জামায়াতের রাজনীতির ধারাবাহিকতার অংশ। ৭১ সালে তারা ইসলামের কথা বলেই গণহত্যা করেছে, ৭২ সালে ধর্মের কথা বলেই অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, এখনও তাই করছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেই এর জবাব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।


(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এসআর/১৪.০৫ঘ.)