খুলনা: খুলনা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ। ছয় জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় আসনটি নিয়ে বিপাকে রয়েছে দলটি। দল কাকে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার অন্ত নেই।
আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই এ আসনে প্রার্থী হতে চান। সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত হওয়ায় প্রায় প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এ আসনে জয়লাভ করেন। আসনটি যেন আওয়ামী লীগের ‘রিজার্ভ সিটে’ পরিণত হয়েছে।
অপরদিকে এ আসনটি নিয়ে অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। খুলনা জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আমীর এজাজ খান একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় তারা স্তস্তিতে রয়েছেন। তিনি গতবারও ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন।
আ.লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন দলের ছয় নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন, খুলনা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস, বর্তমান সাংসদ ননী গোপাল মন্ডল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল, দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হোসেন এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান।
মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতারা অনেক দিন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এর পাশাপাশি দলের হাইকমান্ড ও শীর্ষ নেতাদের কাছে তদবির শুরু করেছেন।
একটি আসনে ছয় জন মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন ও কোন্দল প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। এমনকি হামলা ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে।
খুলনা জেলার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসন গঠিত। স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ছাড়া প্রতিবারই এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালে এ আসনে বিজয়ী হন শেখ হারুনুর রশীদ। ১৯৯৬ সালেও তিনি দলের মনোনয়ন পান। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত পঞ্চানন বিশ্বাস বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হারুনকে পরাজিত করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পঞ্চানন বিশ্বাস পুনরায় নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ননী গোপাল মন্ডল দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী আমীর এজাজকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।
বর্তমান সাংসদ ননী গোপাল মন্ডল আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় নিজের আগ্রহ জানিয়ে বলেন, ‘সাংসদের দায়িত্ব পালন ও দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
দলের একাধিক নেতা জানান, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বেশ আগেভাগেই তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন।
শেখ হারুনুর রশীদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এ আসন থেকে একবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তিনি এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রার্থী হতে তিনি এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দলীয় সকল কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এ আসন থেকে দু’বার নির্বাচিত সাংসদ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। এবার মনোনয়ন পেতে তিনি জোরালো তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম খানও প্রার্থী হতে আগ্রহী। তিনিও এবার দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে তারা অনুসারীরা জানিয়েছেন।
দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও সাংসদ শেখ হেলালের ছোট ভাই শেখ সোহেল। তাঁর ঘনিষ্টজনরা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অনেক আগে থেকেই তার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আসন এলাকায় তাঁর ছবি সম্বলিত ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
এছাড়া দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হোসেনও প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তা মেনে নেব।’
(ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর/১০.৫৮ঘ.)