logo ০৪ জুলাই ২০২৫
শীতের রাতে গরম পিঠা
সাইফুর তালুকদার, ঢাকা টাইমস
২৪ নভেম্বর, ২০১৩ ১০:৩৮:৫৯
image


সিলেট: চলছে অগ্রহায়ণ মাস। শীতের বাতাস বইতে শুরু করেছে বাংলার প্রকৃতিতে। কমে গেছে রোদের খরতাপ। সারাদেশে বইছে হালকা হিমেল হাওয়া। ভোর ও সন্ধ্যার পর বেড়ে যায় তার প্রকোপ। ইতোমধ্যে সকাল ও পড়ন্ত বিকেলে শীতের কাপড় পরতে শুরু করেছে মানুষ।

শীতের পোশাক বিক্রির মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও সেরে নিয়েছেন নিজেদের মতো করে নগরীর বড়ো বড়ো রাস্তার পাশের ফুটপাত আর যেখানে পেরেছেন খোলামেলা এক টুকরো জায়গার দখল। অর্থাৎ শীতকে বরণ করে নেয়ার জন্য এখন তৈরি সবাই।

শীতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে শীতের পিঠা। শীত আসবে আর পিঠা খাওয়ার ধুম পড়বে না এটা যেনো ভাবাই যায় না। বিশেষ করে শীতের আগমনের ঠিক আগ মুহূর্তে অগ্রহায়ণের শেষ আর পৌষের শুরুতে ঘরে তোলা নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা তৈরির সংস্কৃতি তো বাংলার গ্রামেগঞ্জে আবহমান কাল ধরে চলে আসছে।

এখন শহরও এ থেকে বাদ যায়না। নাগরিক ব্যস্ততা আর নানান ঝুট ঝামেলায় শহরে পিঠা উৎসবের সেই চিত্র এখন আর সেরকম দেখা যায় না। শহরের নাগরিকদের পিঠার সেই স্বাদ দিতে বিভিন্ন স্থানে শীতের সময় গড়ে উঠে পিঠার দোকান। সে দোকানগুলোর বেশিরভাগই হয় অস্থায়ী। শীতের সময় চিতল পিঠার সঙ্গে সরিষা ও শুটকি ভর্তার স্বাদ আলাদা। আর গরম গরম ভাপা পিঠা হলে তো কথাই নেই।

অনেক সময় বিভিন্ন চায়ের দোকানীরা শীতের সময় বাড়তি আয়োজন হিসেবে পিঠা বিক্রি করে থাকেন। তবে পিঠা বিক্রির বেশিরভাগ দোকান হয়ে থাকে বিভিন্ন বড় বড় রাস্তার মোড়ে ভ্রাম্যমাণ রিকশা ভ্যান বা ঠেলা গাড়িতে। এসব পিঠার দোকানে মূলত: ভাপা পিঠা, চিতল পিঠা এবং তেলে ভাজা পিঠা (সন্দেশ) পাওয়া যায়। তবে ভাপা পিঠার ক্রেতাই থাকেন বেশি। সংগত কারণে সবার পছন্দের তালিকায় ভাপা পিঠাই সবার উপরে।

চালের গুঁড়া, নারকেল আর গুড় দিয়ে তৈরি এসব পিঠার বিক্রিও বেশ ভালো। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটও এ থেকে ব্যতিক্রম নয়। নগরীর জিন্দাবাজার, জেলরোড, সোবহানীঘাট, বন্দরবাজার, টিলাগড়, হযরত শাহ্জালাল (র.) এর মাজার, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, কদমতলী বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, বালুচর, মেজরটিলা, হযরত শাহ পরান (র.) এর মাজার গেট, রিকাবী বাজার ও মদিনা মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পিঠার পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

পিঠা বিক্রি হয় ভাপা ও চিতল ৫ টাকা আর তেলে ভাজা পিঠা দোকান ভেদে ৩ থেকে ৫ টাকা। এসব পিঠার ক্রেতা সমাজের নানান শ্রেণির হলেও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা ছাত্রাবাস বা মেসে থাকেন তাদের সংখ্যাই বেশি। ভোর আর সন্ধ্যায় যখন শীত একটু বেশি থাকে তখনই মূলত: এসব দোকান বসে থাকে। তবে শেষ বিকেল থেকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকেই দোকানগুলো জমে উঠে বেশি।

মাঝে মাঝে এসব দোকানে জমে উঠে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জমজমাট আড্ডা। যাদের অনেকেই দূর গ্রামে মা বাবা, বাড়ি ছেড়ে শিক্ষার জন্য এসেছেন নগরে। তাই একটু হলেও ফেলে আসা শৈশবের সেই পিঠার স্বাদ নিতে চান এখান থেকে। কিন্তু মায়ের হাতের সেই মায়া মাখা ছোয়া কি আর এখানে মেলে!

বন্দর বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠা খাচ্ছিলেন কয়েকজন তরুণ। কথা হয় জাকির হোসেন সাগর নামে এক পিঠা প্রেমিকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বাসায় পিঠা খাই। কিন্তু কনকনে শীতে বন্ধুদের নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়ার মজাটাই আলাদা।’

রিকাবীবাজার এলাকার পিঠা বিক্রেতা সুমন আহমদ জানান, ‘এটি মৌসুমী ব্যবসা হলেও বিক্রি বেশ ভাল। সাধারণত শীতে অন্য কাজ করা খুবই কষ্টকর। তাই বিকেলে রাস্তার পাশে বসে পিঠা বিক্রি করি। এতে নিজের পিঠা খাওয়ার চাহিদাও পুরণ হয় আনন্দও লাগে। লাভও ভালো।’

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর/ঘ.)