logo ০৪ জুলাই ২০২৫
তাজরিন ট্রাজেডি: এক বছরেও অপরাধীদের বিচার হয়নি
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২৪ নভেম্বর, ২০১৩ ২১:৪৫:১৬
image

 


ঢাকা: তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন লাগা ঘটনার একবছর পূর্তি আজ । রাজধানী ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় গতবছর ২৪ নভেম্বর এই গার্মেন্টে আগুন লেগে মোট ১১২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল।


ঘটনার একবছর পার হয়ে গেলেও আজও এই ঘটনায় অপরাধীদের কোন বিচার হয়নি।রবিবার বিবিসি বাংলার ‘প্রবাহ’ অনুষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।


সেদিন অনেক মা হারিয়েছেন তার প্রিয় সন্তানকে, অনেক স্ত্রী হারিয়েছেন প্রিয় স্বামীকে আবার অনেকে হারিয়েছেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে। এখন সেই দুঃখকে সঙ্গী করে নিয়মিত সংগ্রাম করে দিনাতিপাত করছেন নিহতদের স্বজনেরা।


ওই ঘটনায় নিজ স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন, আব্দুল জব্বার ও সাদ্দাম হোসেন নামের দুই আপন ভাই।তারা এখন তাজরিনের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।তাদের দুই ভাইয়ের দুটি সন্তান আছে।এখন বাচ্চা দুইটির দেখাশোনা করছেন তাদের মা জোবেদা বেগম।


তিনি বলছেন, ছোট বাচ্চা দুটি প্রায়ই ইশারা দিয়ে ভবনটি দেখিয়ে দেয় আর বলে মা কাজে গেছে। পরিবারের দুই ছেলেরই স্ত্রী হারানো আর দুটি বাচ্চার মা হারানোর ঘটনার এক বছর পরও সে ঘটনাটি ভুলতে পারছেন না জোবেদা বেগম।


কাঁদতে কাঁদতে জোবেদা বেগম বলেছেন, রাতে ঘুমাতে পারি না। হাড়ি ভর্তি খাবার থাকে কিন্তু খেতে মন চায় না। বুকের জ্বালা যেন কিছুতেই জুড়ায় না।


সেদিন আগুনের সূত্রপাত ছিল নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে। ৯ তলা ভবনটির নিচ তলায় গুদাম থেকে শুরু করে সেই আগুন রাত তিনটা পর্যন্ত পৌছায় চারতলা অবধি। আজ একবছর পর সেই ভবনটির বাইরের বিশাল দরজা তালা দিয়ে বন্ধ রয়েছে।


ঝাপসা হয়ে যাওয়া সাইনবোর্ডটি এখনো ঝুলছে। ভবনের দেয়ালে পুড়ে যাওয়া কালো দাগ এখনো চোখে পড়ে। আর বাইরের দেয়ালে লেখা রয়েছে প্রবেশ নিষেধ। এলাকায় বসবাসকারী বহু মানুষ ঘটনার রাত নির্ঘুম পার করেছেন।


ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সেই রাতে আগুনের ধোয়া ছিলা ভীষণ কালো। কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বহু চিৎকার ভেসে এসেছে। অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে বাচার চেষ্টা করেছেন।


ঘটনার পরদিন সকালে ১১২ টি মরদেহ উদ্ধার হয়। তার বেশিরভাগই ছিল পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া। একটি অংশ ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারান। তবে আহতদের সবাই বড় আঘাত পেয়েছিলেন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে।


সুইং হেলপার আলিনুর লাফিয়ে পড়েছিলেন তিন তলা থেকে। প্রাণ বেচে গেলেও ফুসফুসে এবং পায়ে বড় ধরনের আঘাত পান।


তিনি বলেন, ফুসফুসে রক্ত জমে গিয়েছিলো। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং কয়েকবার তা পরিষ্কার করা হয়েছে। এখন ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। আর পায়ের ভেতরে অস্ত্রোপচার করে কয়েকটি পিন বসানো হয়েছে।


আলিনুরের মত ৯৭ জন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিয়েছেন। পোশাক মালিকদের সংগঠন এরকম আহতদের প্রত্যেককে একলাখ টাকা করে সহায়তা দিয়েছে। তবে আলিনুর বলছেন, গত একবছরে ওষধ ও চিকিৎসক খরচ বাবদ তা শেষ হয়ে গেছে।


কারখানাটিতে আগুনের ঘটনার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল এবং তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দেয়া অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার চেষ্টা করা হয়েছে। পরে আরো যোগ হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের দেয়া অর্থ সহায়তা।


বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম বলছেন, মরদেহ সনাক্ত হয়েছে এমন প্রতিটি পরিবারকে দেয়া হয়েছে সাত লাখ টাকা করে। ১৩ টি মরদেহ সনাক্ত হয়নি। আহতদের দেয়া হয়েছে একলাখ টাকা করে। আর এতিম হয়ে যাওয়া বাচ্চাদের মাসে চার হাজার টাকার করে দেয়া হচ্ছে।


সহায়তা হিসেবে দেয়া এই অর্থ অবশ্য ক্ষতিগ্রস্তদের মনের ক্ষোভ মেটাতে পারেনি। ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের এখনো সাজা না হওয়ায়, একটি অবিচারের অনুভূতি তাদের মনের মধ্যে রয়েই গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ অজানা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।


ঘটনার ছ’মাসের মাথায় নৃবিজ্ঞানী অ্যাক্টিভিস্ট গোষ্ঠী অবহেলার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। ডিএনএ টেস্টের পরও মরদেহে মেলেনি এমন একটি পরিবারও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।


নিশ্চিন্তুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অভিযোগ, দফায় দফায় তদন্ত আর নানা আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়া।


(ঢাকাটাইমস/২৪ নভেম্বর/এসইউএল/জেডএ.)